মহান বিজয় দিবসে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরন

226

* জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

মিরর বাংলাদেশ : মহান বিজয় দিবস সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে উদযাপনে লাখো মানুষের ঢল নেমেছে। বিজয়ের দৃপ্ত শপথ নিয়ে হাতে লাল সবুজের পতাকা আর ফুলের শোভায় সাধারণ মানুষ উদযাপন করে বিজয়ের ৫৩বছর। এছাড়া সারা দেশে মহান বিজয় দিবসে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তাদের স্মরন করে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
বিজয় দিবস উদযাপন এবং জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সকাল থেকেই নারী, পুরুষ, শিশু আর বৃদ্ধদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠে পুরো স্মৃতিসৌধ এলাকা। বিজয়ের এ দিনে বাঙ্গালী জাতি যেন আরো উজ্জীবিত হয়ে উঠে। এই দিনে বিনম্র শ্রদ্ধাবনত চিত্তে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করছে পুরো জাতি।
দিনের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এসময় তারা শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করেন। তিন বাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল তাদের গার্ড অব অনার প্রদান করেন। এসময় বিউগলে বেজে উঠে করুন সুর। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে নিয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।
এসময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও এ এইচ এন খাইরুজ্জমান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর ও দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়–য়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধ এলাকা ত্যাগ করার পর জাতীয় স্মৃতিসৌধ সর্ব-সাধারনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এসময় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান স্পিকার, মন্ত্রী পরিষদ সদস্যরা ও কূটনৈতিকবৃন্দসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা।
এর পরপরই জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা সাধারণ মানুষের ঢল নামে। ফুলেল শ্রদ্ধায় বিজয়ের উচ্ছাসে উদ্ভাসিত সূর্যের মতোই আলোকিত করে জাতির সূর্য সন্তানদের। যাদের রক্তে অর্জিত হলো স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের, সেই সকল শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধের মূল ফটকে জড়ো হতে থাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এসময় সকলের চোখে মুখে ছিল বিজয়ের উচ্ছাস।
বেলা বৃদ্ধির সাথে সাথে শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের ঢলও যেন বাড়তে থাকে স্মৃতিসৌধ চত্ত¡রে। সংসদ সদস্যবৃন্দ, সেক্টর কমান্ডার ফোরাম, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, আওয়ামী যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, ছাত্রলীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, জাতীয় পার্টি, জাসদ, বিপিএটিসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও এর বিভিন্ন হল সমূহ, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় ও এর বিভিন্ন হল সমূহ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এসময় জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর শহীদদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানান।
মূল শহীদ বেদী ভরে উঠে ফুলে ফুলে। লাল সবুজের পতাকায় ছেয়ে যায় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ। মানুষের হাতে হাতে ফুল আর পরনে ছিল লাল সবুজের ছোয়া। সারিবদ্ধভাবে একে একে শ্রদ্ধা জানাতে থাকেন সকলেই। স্মৃতিসৌধ এলাকা পরিণত হয় জনসমূদ্রে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠে স্মৃতিসৌধ এলাকা। চারিদিক থেকে আসা মানুষের ঢল মিশতে থাকে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে।
স্মৃতিসৌধ এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্মৃতিসৌধ এলাকায় চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরী করে ঢাকা জেলা পুলিশ। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণস্থানে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপনসহ পুরো স্মৃতিসৌধ এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে নেওয়া হয় বিভিন্ন পদক্ষেপ।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা:
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ৫৩তম বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। তিনি গতকাল সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের মহান নেতা ও স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
পরে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলীয় প্রধান হিসেবে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে আরেকবার পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ৫৩ তম বিজয় দিবস উপলক্ষে একটি বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট,একটি উদ্বোধনী খাম ও একটি ডাটাকার্ড অবমুক্ত করেছেন। সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেন। অনুষ্ঠানে একটি বিশেষ সিলমোহর ও ব্যবহার করা হয়।
এ সময় ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। এই ডাকটিকিট, উদ্বোধনী খাম ও ডাটা কার্ড ঢাকা জিপিও’র ফিলাটেলিক ব্যুরো থেকে বিক্রি করা হবে এবং পরবর্তীতে সারাদেশের অন্যান্য জিপিও এবং প্রধান পোস্ট অফিসগুলোতেও পাওয়া যাবে।

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ফলমূল :

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর মোহাম্মদপুর গজনবী রোডস্থ যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন কেন্দ্রে (মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার-১) যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ফলমূল এবং মিষ্টান্ন পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব-২ গাজী হাফিজুর রহমান লিকু এবং প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এবিএম সরওয়ার-ই-আলম সরকার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে এগুলো পৌঁছে দেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, এ সময় প্রতিটি রাষ্ট্রীয় দিবস এবং উৎসবে যেমন স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, পবিত্র ঈদ এবং বাংলা নববর্ষের দিনে স্মরণ করায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যরা। তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানকারী দল আওয়ামী লীগের বিজয় প্রত্যাশা করেন।
মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা সুরক্ষিত থাকবে। শুধু তাই নয়, দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাও অব্যাহত থাকবে এবং স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে। এ সময় যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যরা প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।