নাশকতার আশঙ্কায় ৫ জোড়া ট্রেন বন্ধ:নিরাপত্তায় ২৭০০ আনসার

201

মিরর বাংলাদেশ : রেলওয়ের ডিভিশনাল ম্যানেজার শফিকুর রহমান জানিয়েছেন, নাশকতার আশঙ্কা থেকেই দেশজুড়ে কয়েকটি পথে পাঁচ জোড়া ট্রেন চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। রেলের নিরাপত্তা জোরদার করতে ইতোমধ্যে ২ হাজার ৭০০ আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।  শুক্রবার কমলাপুর রেলস্টেশনে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
তিনি বলেন, নাশকতার আশঙ্কায় এখন পর্যন্ত পাঁচ জোড়া ট্রেন বন্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে ভূয়াপূর, জামালপুর থেকে সরিষাবাড়ী ও যমুনা এক্সপ্রেস আংশিক বন্ধ করা হয়েছে। এগুলো রিমোট এরিয়া এবং রাত্রিকালীন যাত্রা হওয়াতে কোনো দুর্ঘটনা যেন না ঘটে, তাই বন্ধ করা হয়েছে।
শফিকুর রহমান বলেন, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাড়াতে অ্যাডভান্স পাইলটিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনী তাদের স্থাপনাগুলো পর্যবেক্ষণ করছেন।২০১৪ সালে যেসব যেসব জায়গায় নাশকতা হয়েছিল, সেসব জায়গাগুলোতেই নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। কারণ সমগ্র লাইনের কোথায় কোথায় নাশকতা হতে পারে তা আগাম বলা সম্ভব না।
আনসার মোতায়েন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় স্থানীয় পর্যায়ে আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। যেহেতু নাশকতার ধরন চেঞ্জ হয়েছে, সেহেতু আরও আনসার মোতায়েন করা হতে পারে। ইতোমধ্যেই ২ হাজার ৭০০ আনসার মাঠপর্যায়ে মোতায়েন করা হয়ে গেছে।
গত ১৯ ডিসেম্বর ভোরে রাজধানীর তেজগাঁও স্টেশনে নেত্রকোণা থেকে ছেড়ে আসা ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস’ ট্রেনের তিনটি বগিতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে এক নারী ও তার শিশুসন্তানসহ চার যাত্রী দগ্ধ হয়ে মারা যান। সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভায়।
ওই ঘটনার রেশ না কাটতেই ২০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। যদিও প্রাথমিকভাবে রেলওয়ে পুলিশের ধারণা, সেটি কোনো নাশকতা ছিল না। ইঞ্জিনের সাইলেন্সার পাইপ থেকে নির্গত ধোঁয়া চটের বস্তায় বাধাগ্রস্ত হয়ে আগুন লাগে। সঙ্গে সঙ্গে তা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
এর আগে ১৩ ডিসেম্বর ভোর চারটার দিকে গাজীপুরের ভাওয়ালে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেললাইনের একটি অংশ কেটে ফেলে দুর্বৃত্তরা। ওই পথে যাওয়ার সময় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস নামে একটি ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়। দুর্ঘটনায় একজন নিহত ও অন্তত ১২ জন আহত হন।
মূলত রেলপথে এসব নাশকতামূলক কর্মকাÐ রুখতে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। সে ধারাবাহিকতায় রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ রেলস্টেশনগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
জানা গেছে, চলমান হরতাল, অবরোধ ও নাশকতা এড়াতে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে কয়েকটি ট্রেন চলাচল। এ ছাড়া নাশকতা ঠেকাতে লাইনগুলোয় টহল ইঞ্জিন চালু এবং নিরাপত্তা বাড়াতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ২ হাজার ৭০০ আনসার সদস্য নিয়োগ দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এর আগে নাশকতা এড়াতে পশ্চিমাঞ্চলের রাতের কয়েকটি ট্রেন বন্ধ হবে বলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার ঘোষণা দেন।
রেলসূত্র বলছে , নাশকতা এড়ানোর লক্ষ্যে রাতে চলাচলরত অগুরুত্বপূর্ণ চারটি ট্রেন চলাচল বন্ধ এবং আন্তঃনগর যমুনা এক্সপ্রেসের যাত্রা সংক্ষিপ্ত করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। একই সঙ্গে ঢাকা থেকে প্রতিটি ট্রেন চালুর আগে টহল ইঞ্জিন চালু ও রেলের নিরাপত্তায় ২ হাজার ৭০০ আনসার সদস্য নিয়োগ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এরই মধ্যে আনসার সদস্যরা কাজ শুরু করেছেন। দুই হাজার আনসার রেলওয়ে পুলিশ ও ৭০০ আনসার সদস্য রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) অধীনে নিয়োগ করা হয়েছে।
এদিকে রেলওয়ে সূত্র জানায়, রাতের বেলায় যে ট্রেনগুলো চলাচল করে এবং যেসব রুটে ঝুঁকিপূর্ণ স্পট বেশি, সেই ট্রেনগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হবে। এরই মধ্যে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ রাজশাহী থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত উত্তরা এক্সপ্রেস এবং ঈশ্বরদী থেকে রহনপুর পর্যন্ত কমিউটার ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে।