* ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাব
মিরর বাংলাদেশ :
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে রোববার রাত থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত টানা বর্ষনে ফতুল্লা অধিকাংশ রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও কোমর সমান পর্যন্ত পানি। ফলে চরম ভোগান্তরি শিকার হতে হচ্ছে বাসার বাইরে বের হয়ে নিজ নিজ কমস্থল বা নিজ গন্তব্য স্থলে যাওয়া মানুষদের। অনেক বাসা বাড়িতে পানিবদ্ধতার কারনে বেড়েছে আরো দুর্ভোগ।
সরজমিনে ফতুল্লার পাগলার নন্দলাপুর নয়ামাটি,শাহিমহল্লা,মুসলিমপাড়া,শহীদ নগর, দৌলতপুর, মুন্সিবাগ, আদর্শ নগর, নূরবাগ, পিলকুনী,পিলকুনী,ব্যংককলোনী,শিয়াচর,লালখা,রেল স্টেশন,ব্যাপারী পাড়া,খোজ পাড়া, লালপুর,পৌষাপুকুর পাড়,টাগার পাড় সহ সহ আশপাশের প্রায় বেশ কয়েকটি গ্রামের রাস্তা-ঘাট টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে। আর এতে করে ঘরবন্দী হয়ে পড়েছেন প্রায় কয়েক লাখ মানুষ।
তবে সব চাইতে ভয়াবহ অবস্থা লালপুর পৌষাপুকুর এলাকা। এই এলাকার প্রতিটি অলিগলিতেই হাটু সমান বা তারও বেশী পানিতে তলিয়ে গেছে রাস্তাগুলো। একাধিক বাসা বাড়ীতে ও
প্রবেশ করেছে পানি।আর এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। প্রতিদিনের চলাচলের প্রধান সড়ক একটু বৃষ্টি হলেই চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় এই রাস্তায় যাতায়াতরত স্কুল-কলেজর ছাত্র-ছাত্রী ও কর্মজীবী মানুষের।
এই ভোগান্তির শেষ কোথায় তাও যেন জানা নেই পৌষাপুকুর পাড়ের সাধারণ মানুষের, দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত এ রকম চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন অবহেলিত লালপুর পৌষাপুকুর পাড়ের মানুষ।
পৌষাপুকুর পাড় কবরস্থান সড়কের বাসিন্দা সামছুল জানান, বৃষ্টির পানি না সরতে পারায় রাস্তা ডুবে আছে। মানুষের চলাচলে খুবই কষ্ট হচ্ছে।
একই গলির বাসিন্দা রহিমা জানান, অনেকে বাসায় এখনো বৃষ্টির পানি আটকে আছে।রান্না ঘরেও পানি প্রবেশ করেছে। তাই বাধয় হযে বৃস্টিতে ভিজে পাশের বাড়ী থেকে রান্না করে নিয়ে এসেছি।আমাদের অনেক দুর্ভোগ। ড্রেন না থাকায় পানি সরবেনা সহজেই। ফলে এই ভোগান্তি আর কতোদিন পোহাতে হবে আল্লাহই জানে।
এদিকে কর্মজীবী মানুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও খেটে খাওয়া মানুষ মঙ্গলবার ঘর থেকে বাইরে বের হয়েই পড়েন বিপাকে। রাস্তায় পানিবদ্ধতারা কারনে বাড়ে অন্তহীন দুর্ভোগ-ভোগান্তি। পানির কারনে সড়কে গাড়ির সংখ্যাও কমে যায়। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে রিকশা-অটোরিকশা বা গণপরিবহণের সাক্ষাৎ মেলে।
ফলে পরিবহণ সংকটে মানুষের কষ্ট আরও বেড়ে যায়। যানবাহনের তীব্র সংকটের সুযোগে সিএনজি অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও রিকশার ভাড়া হয়ে যায় দ্বিগুণ, কোথাও তিনগুণ।
নগরীর চাষাঢ়া, কলেজ রোড, জামতলা, মাসদাইর, গলাচিপা, ভূঁইয়ারবাগ, দেওভোগ দাতা সড়ক, দেওভোগ পানির টাংকি, নন্দীপাড়া, উকিলপাড়া, আমলাপাড়া, কালির বাজার, দেওভোগ পাক্কা রোড, খানপুর, মিশনপাড়া, খানপুর বউ বাজার, গোয়ালপাড়াসহ নিচু এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু সড়কের বিভিন্ন জায়গা ও প্রেস ক্লাবের সাথে ভাষা সৈনিক সড়কে জলাবদ্ধতা চরম আকার ধারণ করে। বৃষ্টির পানি আটকে যাওয়ায় অনেক সড়ক অচলও হয়ে পড়ে। এসব জলাবদ্ধতার সঙ্গে ময়লা আবর্জনার স্তূপ জমে যায়।
অফিসে যাচ্ছিলেন মে. আল মেহেদী, তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, সকালে সেই মোহাম্মদপুর থেকে এসেছি কর্মস্থলে। গাড়ি থেকে নামার কোন রিক্সা পাচ্ছি না। যেটা পাই সেটাও ভাড়া অতিরিক্ত চায়।
২নং রেলগেট থেকে চাষাঢ়া যাচ্ছিলেন এক নারী। সে জানায়, সব সময় মিশুক ভাড়া ১০টাকা নেয় ২নং গেট থেকে চাষাঢ়া। কিন্তু এই দুর্ভোগের অবস্থায় ভাড়া বাড়ায় দিছে। ১০টাকার ভাড়া ২০টাকা করে দিয়েছে। এসব দেখার জন্য কোন প্রশাসন বা কোন সংস্থাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই হলো আমাদের জীবন।
গলাচিপা এলাকার বাসিন্দা জোনায়েদ জানান, গলাচিপা থেকে উকিলপাড়া সব সময় ২০-৩০টাকায় যাই। আজকে রাস্তায় পানি থাকায় সেই ভাড়া ৭০-৮০টাকায় চলে আসছে।
অন্যদিকে এতো ভাড়া বেশী নেয়ার বিষয়ে রিক্সা চালকরা জানায়, রাস্তায় পানির জমাট হওয়া আমাদের রিক্সার প্যাডেল চালাতে ডাবল খাটনি খাটতে হয়। বেশী পরিশ্রমের জন্য বেশী ভাড়া নিতে হয়। পানি কমে গেলে আবার ভাড়া আগের মতো নিবো।
ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক ফখর উদ্দিন আহাম্মদ জানায়, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ঝড়ো বাতাসের কারণে নারায়ণগঞ্জে কিছু এলাকায় গাছও ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। শহরের চাষাঢ়ায় একটা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড ভেঙ্গে বিদ্যুতের তারে পড়ে আগুন লেগে যায়। এতে কোন ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ঘূর্ণিঝড় রিমালে নারায়ণগঞ্জে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেনি।