জুলাই যোদ্ধা সিনিয়র সাংবাদিক নাছির উদ্দিন শােয়েবকে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের সম্মাননা

217

মিরর বাংলাদেশ : বাংলাদেশ থেকে ফ্যাসিবাদ তাড়াতে জীবনের বাজি রেখে যে সব যোদ্ধরা লড়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন সিনিয়র সাংবাদিক নাছির উদ্দিন শোয়েব। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময়  গেলো বছরের ১৯ জুলাই ফ্যসিষ্টদের নগ্ন হামলার শিকার হয়ে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেছেন তিনি। এ জুলাই যোদ্ধাকে রোববার সম্মাননা দিয়েছে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট। নাছির উদ্দিন শোয়েব জার্তীয় প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্য। এছাড়া তিনি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি( ডিআরইউ) , ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ক্র্যাব)এর সিনিয়র সদস্য। এছাড়া তিনি দৈনিক আমার দেশসহ দেশের একাধিক র্শীষ স্থানীয় পত্রিকার পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি দৈনিক সংগ্রামের সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত।

রোববার বিকালে তথ্য ভবনে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট আয়োজিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ সাংবাদিক-পরিবার ও আহত সাংবাদিকদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।

সাংবাদিকদের কল্যাণে সরকার কাজ করছে জানিয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, সাংবাদিকদের কল্যাণে নবম ওয়েজবোর্ড কার্যকর ও সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণয়নসহ বেশকিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকার। পাশাপাশি সাংবাদিকদের চাইলেই চাকরিচ্যুত করাকে কীভাবে রোধ করা যায়, সে বিষয় নিয়ে আমরা কাজ চলছে।

তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকদের বেতন যদি না দেয়া হয়— সেসব হাউসদের নিয়ে কী করা যায় সেই বিষয়টি আমরা দেখবো। সাংবাদিকদের হাউসের মালিকানা বা অংশ বা অন্য কোনো সুবিধা দেয়ার বিষয়টিও পর্যালোচনা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশের শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে পরিবর্তন সম্ভব। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার এবং বন্ধের ক্ষেত্রে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে কোনো প্রভাব থাকে না বলে দাবি করেছেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
উপদেষ্টা মাহফুজ বলেন, আমরা মন্ত্রণালয় থেকে কাউকে কল দেই না কাউকে বাধ্যও করি না কোনো কিছুর প্রচার বা লিখার ক্ষেত্রে। তবে গত ৬ মাসে অনেকগুলো হাউস গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ও ঐক্যকে ভণ্ডুল করতে কাজ করছে। তিনি বলেন, কারফিউয়ের সময়ে সাংবাদিকতা খুবই একপাক্ষিক হয়েছিল। বিটিভি আর আগুনসন্ত্রাস দেখাতেই ব্যস্ত ছিল টিভি চ্যানেলগুলো। তবে সেক্ষেত্রে বেশকিছু পত্রিকা ভালো কাজ করেছেন, সত্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। এ সময় দেশের গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল ও জবাবদিহিমূলক ভূমিকা পালন করারও তাগিদ দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে মাঠের সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছেন। এজন্য তাদের কল্যাণে সাংবাদিক সংগঠনসহ স্ব স্ব মিডিয়া হাউসকে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। অনুষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ সাংবাদিক পরিবার এবং আহত ও সাহসী সাংবাদিকদের সম্মাননা প্রদান করা হয়।

oplus_34

সেই ভয়ঙ্কর ১৯ জুলাই নিয়ে সাংবাদিক নাছির  উদ্দিন শোয়েব‘র স্মৃতিচারণ
=================
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে মাঠে থেকে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় রক্তাক্ত হওয়া সেদিনের কথা মনে হলে এখনো আঁতকে উঠি। ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই ছিল শুক্রবার। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে উত্তাল ঢাকা। রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রাজধানীর প্রায় সব এলাকা । বিভিন্ন পয়েন্টে দায়িত্ব পালন শেষে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে অফিসের দিকে যাচ্ছিলাম। রামপুরা এলাকার সড়ক চলাচলের অযোগ্য দেখে মোটরসাইকেলে করে হাতিরঝিল সড়ক দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। সামনের দিকে যেতে অনেক স্থানে শিক্ষার্থীদের বাধার সম্মুখীন হলেও পরিচয় পেয়ে সম্মানের সাথে আমাকে পথ ছেড়ে দিয়ে যেতে সহায়তা করে‌। কিন্তু হাতিরঝিলের মধুরবাগ ব্রীজ সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছলে ঘটে ব্যতিক্রম এবং ভয়ংকর ঘটনা। সেখানে শত শত যুবক হাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে আমার মোটরসাইকেল থামিয়ে ঘিরে ধরে। সাংবাদিক পরিচয় দিলে তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে গালাগালি করে। আমার পরিচয়পত্রটি কেড়ে নিয়ে ছুঁড়ে মারে। আমার সাথে থাকা ব্যাগটি তল্লাশির কথা বলে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে দেয়।
এসময় সেখানে থাকা শত শত উশৃঙ্খল তরুণ-যুবক অতর্কিতে আমাকে লাঞ্ছিত করে। “সাংবাদিকরাই সমস্যা করছে” এই কথা বলে আমাকে চারপাশ থেকে ঘিরে রাখা উশৃঙ্খল ব্যক্তিরা জোরপূর্বক মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে দিতে চেষ্টা করে। আমাকে মোটরসাইকেল থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিত চায়। সামনে পেছনে সড়ক আটকানো, হাজারো জনতার বিক্ষোভের শব্দে আমার কথা কেউ শুনছে না।
এসময় অদূরেই অবস্থান করা (পেছনের দিকে) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আমাকে আটকে রাখার দৃশ্য দেখে এগিয়ে এসে তাদের ধাওয়া করলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। দুর্বৃত্তদের হামলা এবং ইটপাটকেলের মাঝে পড়ে যাই আমি। মাথায়, হাতে যখম হয় আমার। ঠিক তখনই হঠাৎ একটি হেলিকপ্টার উড়ে আসার শব্দ পেলাম এবং উপর থেকে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে । আমার হেলমেটটা ওরা আগে কেড়ে নেয়ায় মাথায় গুলি পড়ার আতঙ্কে পড়ে যাই। আমার সামনে পেছনে সড়কের উপরে হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়ার শব্দ পাচ্ছি। হঠাৎ আমার বাম পায়ের হাঁটুর নিচে ক্ষত হয়ে যায় জিন্সের প্যান্ট ছিদ্র হয়ে। কিভাবে হলো কিছুই বুঝতে পারলাম না।
শিক্ষার্থীরা দ্রুত আমাকে হামলা থেকে উদ্ধার করে ঘটনা স্থল থেকে সরিয়ে দেয়। এরপর অফিস পর্যন্ত আসলে সহকর্মীরা আমাকে দ্রুত মগবাজার ওয়্যারলেস রেলগেট এলাকায় ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। আমি এক মাসের বেশি সময় ধরে চিকিৎসা নিয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ আমাকে সুস্থ করেছেন।
এরপর খোঁজ নিয়ে জানতে পারি- ছাত্রজনতার আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে মগবাজার- মধুবাগ এলাকায় তখনক সক্রিয় ছিল স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ। তারা ছদ্মবেশে হাতিরঝিল সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে সংঘবদ্ধ হয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে সাংবাদিকদের টার্গেট করে হামলা চালাতো। আন্দোলনে যোগ দেয়া শিক্ষার্থীদেরকেও তারা পুলিশের সাথে মিশে হামলা করতো। আমিও সেদিন তাদের হামলার শিকার হয়েছিলাম।