দেশবাসীকে বাঁচাতেই সবকিছু বন্ধ করা হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

802

ফাইল ছবি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মিরর বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে দেশবাসীকে বাঁচাতেই সবকিছু বন্ধ করা হয়েছে। এ ভাইরাসের কারণে বিশ্ব স্থবির। আমাদের দেশে যাতে এর প্রাদুর্ভাব ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য জনগণকে সচেতন থাকতে হবে। এ লক্ষ্যে দেওয়া নির্দেশনাগুলো মেনে চলতে হবে।’ সবাইকে ঘরে থাকার অনুরোধ করে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়া, মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার আহ্বান জানান তিনি।
রবিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। ভিডিও কনফারেন্স সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাঙালি বিজয়ী জাতি। সবার সহযোগিতায় দেশকে করোনা থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারবো।তিনি বলেন, করোনাভাইরাসটি সংক্রামক। তাই দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে যে ২৩টি নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসটি সংক্রামক। তাই দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে যে ২৩টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা সবাইকে মেনে চলার অনুরোধ জানাচ্ছি।’ এ সময় করোনা প্রতিরোধে সরকারের গৃহীত সব পদক্ষেপ তুলে ধরেন তিনি।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষিদের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী অর্থবছরে চাষিদের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষিরা পাঁচ শতাংশ সুদে এ ঋণ নিতে পারবেন। এছাড়া সারের জন্য ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি, কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের জন্য ১০০ কোটি টাকা, বীজের জন্য ১৫০ কোটি টাকা এবং কৃষকদের জন্য আরও ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, এ প্রণোদনা গ্রামাঞ্চলের ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের জন্য। যারা পোল্ট্রি, কৃষি ফার্ম, ফলমূল, মসলা জাতীয় খাদ্যপণ্য উৎপাদন করবেন তারা এখান থেকে ঋণ নিতে পারবেন।
কৃষকের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ কোনও জায়গা ফাঁকা রাখবেন না। একটু জায়গাও ফেলে রাখবেন না। যার যতটুকু জায়গা আছে সবটুকুতে চাষাবাদ করুন।’
তিনি বলেন, কৃষক যাতে ফসলের ন্যায্য দাম পায় সরকার সে বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষ রাখবে। এ লক্ষ্যে এবার খাদ্য মন্ত্রণালয় দুই লাখ মেট্রিক টনের বেশি ধান-চাল ক্রয় করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন ধান কাটার মৌসুম। কৃষি শ্রমিকদের কাজ ও যাতায়াতে সহযোগিতা করুন। যাতে তারা যেখানে কাজ করতে যেতে চায়, সেখানে গিয়ে কাজ করতে পারেন।’
বাংলা নববর্ষের সব অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে আবারও উল্লেখ করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘নববর্ষের সব অনুষ্ঠান, জনসমাগম ঘটিয়ে বাইরে কোনও প্রোগ্রাম করা যাবে না। ঘরে বসে রেডিও-টেলিভিশনে অনুষ্ঠান হবে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় উদযাপন করা যাবে। কিন্তু কোনও জনসমাগম করা যাবে না। জনসমাগম করলে এই ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে যাবে। সব অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে। তবে, বাসায় বসে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনুষ্ঠান করলে কেউ আপত্তি করবে না।’
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে হাট-বাজার সম্পূর্ণ বন্ধ না রেখে বড় মাঠ দেখে সপ্তাহে একদিন অনন্ত হাঁট চালু রাখতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে মানুষের অন্তত স্বাভাবিক জীবনযাত্রা পরিচালনা করা সহজ হবে বলে জানান তিনি।
করোনাভাইরাস সংকট চলাকালীন কৃষি খাতে বিভিন্ন উদ্যোগ ও করণীয় গ্রহণের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এরইমধ্যে প্রশাসন এবং পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা তাদেরকে যথাযথ জায়গায় যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন। অর্থ্যাৎ কাজ একেবারে বন্ধ থাকবে না, কারণ একটা দেশ স্থবির হতে পারে না। কাজেই সেখানে তারা যদি যেতে পারেন, কাজ করতে পারেন।’
খাবারের দোকান পাঠ, ওষুধের দোকানপাঠ নেহাত প্রয়োজনীয় জিনিস সেগুলো সুনির্দিষ্ট সময় খোলা রাখতে হবে যেন মানুষকে জিনিসগুলো সরবরাহ করা যায়। সেদিকে খেয়াল রাখতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর আজকাল তো ডিজিটাল বাংলাদেশ, টেলিফোন সকলের আছে, মোবাইল ফোন আছে। আর এটার কিছু কিছু উদ্যোগও নিতে পারেন। যেটা নির্দেশনা তার বাড়িতে বাড়িতে জিনিসগুলি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা তাতে কিছু লোকের কর্মসংস্থানও হবে। ভ্যান রিকশা কোনকিছু করে পৌঁছে দিলে। অর্থ্যাৎ মানুষের সঙ্গে মানুষের সংস্পর্শ যত কমানো যায় সেটিই ভালো। এটা কমিয়ে রেখে আপনি আপনার অনেক কাজ যেতে পারেন। কাজেই আমাদের ফসল নষ্ট হওয়া বা তরিতরকারি ফলমূল যেগুলি হচ্ছে, সেগুলি নষ্ট হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সেটা পাঠানোর জন্য আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে সবাইকে আমরা অনুরোধ করছি যেন পণ্যগুলো যথাযথ জায়গায় পৌঁছে বাজারজাত করার ব্যবস্থা করে দিতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘তবে বাজারে যাওয়ার সময়ও এই দূরত্বটা বজায় রাখতে হবে। এমননি যেখানে হাঁট হয়। হাট বাজারও সম্পূর্ণ বন্ধ না রেখে ঠিক হাটের জায়গায় খুব বেশি লোক সমাগম হবে তাই বড় মাঠ দেখে সুর্নিদিষ্ট জায়গা চিহ্নিত করে দুরত্ব বজায় রেখে রেখে কেউ হাটে পণ্য বিক্রি করার একটা ব্যবস্থা সপ্তাহে একদিন অন্তত করা যায়। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা আছে, আমাদের যারা প্রশাসনের সঙ্গে আছেন তারা এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা আছেন, সবাই মিলে ওইভাবে যদি একটা প্ল্যান করে আপনারা করেন, তাহলে কিন্তু মানুষের অন্তত স্বাভাবিক জীবনযাত্রাগুলো পরিচালনা করার সহজ হবে। সে ব্যবস্থাটা আপনারা নিতে পারেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা খোলা জায়গা, মাঠ যেখানে দূরত্বটা বজায় রেখে রেখে যার যার পণ্য নিয়ে বসবে এবং সবাই সেটা সেখান থেকে কিনে নিয়ে চলে যাবে। মানুষের মাঝে অনেক মানুষের যেন ভিড় না হয়, সেই বিষয়টা আপনারা বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন। সেটিই আমি অনুরোধ জানাচ্ছি।##