মিরর বাংলাদেশ : নিজেই ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার মূল টার্গেট ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিনের সেই হামলার ভয়াবহতার মাঝেও তার বেঁচে যাওয়ার পেছনে কোনো কারণ আছে বলেই মনে করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, এর আগেও আমি বহুবার বিভিন্ন হামলার শিকার হয়েছি। কিন্তু এইরকম একটা ভয়াবহ হামলায় বেঁচে যাওয়া নিশ্চয়ই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কিছু কাজ রেখে দিয়েছেন। সেটা সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত কাজ করে যেতে পারব, আল্লাহ সেই সুযোগ দেবেন আমি সেইটুকুই চাই। সেই কাজটুকু আমরা করে যাব। দেশটাকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসাসেবে গড়ে তুলব।
শুক্রবার সকালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের অনুষ্ঠানে সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে যুক্ত হন তিনি।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রান্তে আরও উপস্থিত ছিলেন সভাপতিমÐলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়াসহ মহানগর এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
সভার শুরুতে ২১ আগস্টের শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ।
তৎকালীন সরকারের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদতে গ্রেনেড হামলার আলামত নষ্ট করাসহ পরবর্তী সময়ে মামলা তদন্তের নামে ‘জজ মিয়া নাটক’ তৈরির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। ওই সময়কার এই বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, আমরা পার্লামেন্টের সদস্য , পার্লামেন্টের অনেক সদস্যই এই গ্রেনেড হামলায় আহত। আমরা এটার ওপর আলোচনা করতে চাইলাম। একটা রেজ্যুলেশন নিতে চাইলাম আমরা অপজিশনে থেকে। খালেদা জিয়া কিন্তু সেটা করতে দেয়নি বা এটা আলোচনা করতেও দেয়নি।
‘একটি দেশে এরকম ঘটনা গেছে, আমি বিরোধী দলের নেতা। আমার ওপর এরকম গ্রেনেড হামলা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মতো একটি দল, যে দল দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, সেই দলের একটা সভায় এরকম একটা গ্রেনেড হামলা আর পার্লামেন্টে যিনি সংসদ নেতা, লিডার অব দ্য হাউজ প্রধানমন্ত্রীÍ দাঁড়িয়ে বলে দিলো, ওনাকে আবার কে মারবে? এখন তো বলতে হয় যে আপনিই তো মারবেন! চেষ্টা করেছিলেন, ব্যর্থ হয়েছেন,’Í বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, সেদিন এরকম তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কথা বলে আমাদেরকে কোনো কথা বলতে দেয়নি এই হামলা সম্পর্কে। অথচ আমাদের নেতাকর্মীরা, পার্লামেন্ট মেম্বাররা আহত অবস্থায় হাসপাতালে কাঁতরাচ্ছে, মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। কিন্তু এটা নিয়ে সংসদে কথা বলার অধিকারটুকু আমাদের ছিল না। আমাদের কাউকে মাইক দেয়নি, কাউকে আলোচনা করতে দেয়নি। এর থেকে কী প্রমাণ হয়? তারা যদি সরাসরি জড়িত না থাকবে, তাহলে কি এরকমভাবে বাধা দিত?
তিনি বলেন, আমি জানি না, আল্লাহ কেন বাঁচিয়ে রেখেছেন? এই বাংলাদেশের মানুষের জন্য কিছু যেন করতে পারি, সেজন্যই হয়তো বাঁচিয়ে রেখেছেন। নইলে এরকম অবস্থা থেকে বেঁচে আসা এটা অত্যন্ত কষ্টকর।
সেদিনের সেই হামলায় তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা বলেন, যখন এই গ্রেনেড হামলাটা হলো, একটা সভ্য দেশে হলে তো সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ছুটে আসত, অন্য সবাই ছুটে আসত। আহতদের উদ্ধার করতে, চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে সবাই এগিয়ে আসত। তারা কী করলো? বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বন্ধ, সেখানে কোনো রোগী যেতে পারেনি, চিকিৎসা নিতে পারেনি। ঢাকা মেডিকেল কলেজে বিএনপির যেসব ডাক্তার, কেউ সেখানে উপস্থিত নেই! যাদের ডিউটি ছিল, তারাও নেই! কারণ রোগীদের চিকিৎসা করবে না। আমাদের যারা ডাক্তার ছিল, তারা ছুটে গিয়েছিল এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিল। ঢাকা শহরে কত শত হাসপাতাল-ক্লিনিক আছে, সেটা বোধহয় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর আমি জানতে পারি। কারণ সারা ঢাকা শহরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থেকে আমাদের নেতাকর্মীদের চিকিৎসা নিতে হয়েছিল।
তিনি আর বলেন, সেদিন যারা ছুটে এসে আহতদের মেডিকেলে নিয়ে যেতে শুরু করে, পুলিশ তাদের লাঠিচার্জ করে। সাহায্য করার বদলে উল্টো লাঠিচার্জ করলো, টিয়ার গ্যাস মারল কেন? জাতির বিবেকের কাছে আমার প্রশ্ন এটা কি তারা কখনো চিন্তা করেছে? কেন সেই সময় আহতদের চিকিৎসার জন্য তাড়াতাড়ি হাসপাতালে না নিয়ে সেখানে টিয়ার গ্যাস মারা হলো? লাঠিচার্জ করা হলো? এমনকি অনেকে নিজেদের আপনজনকে তুলতে গেছে, পুলিশ তাদের লাথি মেরে সরিয়ে দিয়েছে, কেন তারা সাহায্য করতে এসেছে!
‘ওই হামলাকারীরা যেন নির্বিঘেœ ওই জায়গা ত্যাগ করতে পারে, সেই সুযোগটা তৈরি করার জন্যই তারা এটা করেছিল। ফলে সরকার মদত না থাকলে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এভাবে হতে পারে না। তাদের ধারণা ছিল, আমি মারা গেছি। যখন শুনলো আমি মারা যাইনি, ওই রাতেই চার জনকে দেশ থেকে পালাতে সুযোগ করে দেয়। আসলে যাদের খুন করারই অভ্যাস, এরা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না। এরা বিশ্বাস করে, ক্ষমতা হচ্ছে দুর্নীতি করে টাকা বানানোর উপায়। এবং তারা যে দুর্নীতি করে গেছে, দুর্নীতির যে বিষবৃক্ষ রচনা করে গেছে সারা বাংলাদেশে, আজ তার কুফল বাংলাদেশ ভোগ করছে। আমরা সরকারে আসার পরে এক এক করে সেগুলো ধরছি, উদঘাটন করছি,’Í বলেন শেখ হাসিনা।
গ্রেনেড হামলায় নিহতদের পাশাপাশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দলের যেসব নেতাকর্মী মারা গেছেন, তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, আমি যখন আহ্বান করেছি যে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে, ত্রাণ দিতে হবেÍ আমাদের আওয়ামী লীগসহ প্রতিটি সহযোগী সংগঠন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের আর কোনো রাজনৈতিক দল এভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি। এজন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজেকে সুরক্ষিত রেখে কাজ চালিয়ে যেতে বলেন তিনি।
স্মরণসভায় সশরীরে উপস্থিত হতে না পারায় দুঃখপ্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। তবে শারীরিকভাবে উপস্থিত হতে না পারলেও ডিজিটাল পদ্ধতিতে যুক্ত হতে পারাকেও সরকারের সাফল্য হিসেবে অভিহিত করেন তিনি। এর পেছনে নিজের সন্তান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের অবদান রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, আজ খুব দুঃখ হচ্ছে যে আমি আপনাদের মাঝে এই জায়গায় আসতে পারলাম না। কিন্তু আজ ভিডিও কনফারেন্সিংর মাধ্যমে বা জুমের মাধ্যমে আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে পাচ্ছি, ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। সেজন্য আমি জয়কে ফোন করেছিলাম, তাকে ধন্যবাদও দিয়েছি। বলেছি, তুমি যদি ডিজিটাল পদ্ধতি না করে দিতে, তাহলে আজ এভাবে আমরা কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করতে পারতাম না, সব স্থবির হয়ে থাকত।
জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করবÍ এটাই আমাদের অঙ্গীকার। আজকের দিনে আমরা সেই অঙ্গীকারটাই করছি। জাতির পিতা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে সোনার বাংলা গড়ে তুলবেন, এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা এবং আমরা তা করব।