ছবি : সরকারী অর্থায়নে ভুমিহীনদের জন্য নির্মিত ঘর পরিদর্শন শেষে রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরীন চৌধুরী । নির্মিত এসব ঘর অচিরেই হস্তান্তর হবে ।
মিরর বাংলাদেশ : ভূমিহীন, গৃহহীন কিংবা জমি আছে ঘর নেই অথবা ঘর আছে কিন্তু জরাজীর্ণ- দেশের এমন মানুষদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে সরকার। বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এমন মানুষদের জন্য এমন ৮ লাখ ৮২ হাজার ৩৩টি ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার। আর এইসব ঘরের চাবি চলতি মুজিববর্ষেই সুবিধাভোগীদের হাতে তুলে দিতে চায় সরকার। ইতোমধ্যে প্রায় ৭০ হাজার ঘরের কাজ শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে। যা শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করবেন।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ কাজের পুরোপুরি তদারিক করে চলেছেন লক্ষীপুর জেলার রায়পুর উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা সাবরীন চৌধুরী
গত ১০ জানুয়ারি কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। দু’দিনের পরিদর্শনে সাথে ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) জনাব আখতার জাহান সাথী, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জনাব মোঃ জাকির হোসেন, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জনাব নূর মোহাম্মদ, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা দিলীপ দে, উপ-সহকারী প্রকৌশলী জনাব তাজুল ইসলাম, সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মিন্টু ফরায়েজী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মহসীন রেজা, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাসহ উপকারভোগী পরিবার।
সরকারী অর্থায়নে নির্মিত ঘর পরিদর্শন শেষ
গত ১৬ জানুয়ারি ইউএনও রায়পুর তার ফেসবুকে লিখেছেন,
”স্বপ্ন এখন মেলছে পাখা জড়িয়ে নিবিড় মায়ায়,মুখরিত হবে পঁচিশ পরিবার
স্বপ্নের ঠিকানায়…..!! ”
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের আওতায় ‘দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি প্রকল্প’, ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায় ‘গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প’ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘আশ্রয়ন প্রকল্প-২’ প্রকল্পের আওতায় দেশের ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ঢাকা, রংপুর ও বরিশাল বিভাগে ৪১৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৪ হাজার ৫৩৮টি পরিবারকে ঘর বানিয়ে দেবে আশ্রয়ন প্রকল্প-২। রাজশাহী, সিলেট ও খুলনা বিভাগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগসহনীয় গৃহ নির্মাণ কর্মসূচির আওতায় ৩৪৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০ হাজার ৩৭৩টি পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে। আর চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ বিভাগে ভূমি মন্ত্রণালয়ের গুচ্ছগ্রাম ২য় পর্যায় প্রকল্পের আওতায় ২৫৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে ১৪ হাজার ৮৯২টি পরিবারকে। এর বাইরে সরকারের অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পও এই উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে কাজ করছে।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিকা অনুসরণ করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসকরা সুবিধাভোগীদের তালিকা তৈরি করেছেন। ক এবং খ দুই শ্রেণিভুক্ত করে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এক শ্রেণিতে রয়েছেন- যেসব পরিবারের কোনো ঘর-জমি কিছুই নেই। আরেক শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে যাদের এক বা দুই শতাংশ জায়গা আছে কিন্তু ঘর নেই অথবা ঘর আছে তবে তা খুব ঝুঁকিপূর্ণ। তবে দেশের বিভাগীয় সদর ও জেলা শহরে স্থায়ী ভূমিহীন বাসিন্দারা এই কর্মসূচির আওতায় পড়বেন না।
ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে পৌনে তিন লাখের মতো ভূমিহীন পরিবার রয়েছে। এসব ভূমিহীন পরিবারই ঘর পাবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিটি পরিবারের জন্য সেমিপাকা বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিটি বাড়িতে থাকছে দুটি শোবার ঘর, একটা রান্নাঘর, একটা ইউটিলিটি রুম, একটি বারান্দা ও টয়লেট। ইটের দেয়াল, কংক্রিটের মেঝে এবং রঙিন টিনের ছাউনি। ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা প্রতিটি ঘর যাতে টেকসই হয় সেজন্য ভূমিকম্পরোধক ব্যবস্থাও থাকছে। সারাদেশে গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণের এই বিশাল কর্মযজ্ঞ মনিটর করছেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই।
বিজ্ঞাপন
এ প্রসঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘দেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন ঘোষণা বাস্তবায়নে তার দিক নির্দেশনা মেনেই কাজ করছি। সংশ্লিষ্ট তিন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হচ্ছে। তালিকা অনুযায়ী দেশের ৮ লাখ ৮২ হাজার ৩৩টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার ঘর পাবে। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মধ্যেই এসব ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে।
জানা গেছে, প্রথম ধাপে ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতাংশ খাস জমি দিয়ে ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে। ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত এমন পরিবারের সংখ্যা (জুন ২০২০ পর্যন্ত) ২ লাখ ৯৩ হাজার ৩৬১টি। আর ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত অর্থাৎ যার ১-১০ শতাংশ জমি আছে কিন্তু ঘর নেই বা ঘর আছে খুবই জরাজীর্ণ এমন পরিবারের সংখ্যা ৫ লাখ ৯২ হাজার ২৬১টি। ক ও খ দুই শ্রেণিতে মোট পরিবারের সংখ্যা ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২২। এরই মধ্যে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য প্রায় ৭০ হাজার ঘর নির্মাণ শেষ হয়েছে। আগামী ২০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে সেগুলো উদ্বোধনের কথা রয়েছে। এর আগে গত ১৩ অক্টোবর আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবসে ১৭ হাজার দুর্যোগসহনীয় ঘর অসহায়দের মাঝে ভার্চুয়ালি তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিজ্ঞাপন
উল্লেখ্য, দেশের একটি মানুষও গৃহহীন বা ভূমিহীন থাকবে না- এমন ঘোষণা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ২০২০ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন, মুজিবর্ষে দেশের কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না। সরকার সব ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে ঘর তৈরি করে দেবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেই ঘোষণা বাস্তবায়নে মাঠ প্রশাসনের কাছে নির্দেশনা পাঠানো হয়। সে অনুযায়ী শুরু হয় প্রতিটি অঞ্চলে গৃহহীনদের তালিকা তৈরির কাজ। তালিকা তৈরি শেষে শুরু হয় বাড়ি নির্মাণ।
এরই মধ্যে প্রায় ৭০ হাজার বাড়ির কাজ শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে। যা শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করবেন। বাকি সব ঘর চলতি মুজিববর্ষের মধ্যেই নির্মাণ করে সুবিধাভোগীদের হাতে তুলে দিতে চায় সরকার। যা দেশের গৃহহীন অসহায় মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভূমিহীন, গৃহহীনদের পাশাপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যও ১৪ হাজার গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া মুজিবর্ষে দেশের শতভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়ে গোটা দেশকে আলোকিত করার কাজও চলছে।