করোনা ভাইরাস অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে –প্রধানমন্ত্রী

454

মিরর বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সম্মিলিত পদক্ষেপের ফলে করোনাভাইরাস অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। করোনাকালে প্রত্যেকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার ফলে করোনার মতো একটা মহামারি থেকে আমরা অনেকটাই সুরক্ষিত হতে পেরেছি।
রোববার সকালে নারায়ণগঞ্জে কুমুদিনী ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস অ্যান্ড ক্যানসার রিসার্চ এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভাচুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। নারায়ণগঞ্জের কুমুদিনী কমপ্লেক্স প্রান্তে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব প্রসাদ সাহা। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান, পরিচালক শ্রীমতি সাহা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা ভ্যাকসিন নিচ্ছেন তারাসহ সবাই যদি স্বাস্থ্যসুরক্ষাবিধি মেনে চলে তাহলে আশা করি, দেশ থেকে করোনার প্রাদুর্ভাব পুরোপুরি চলে যাবে।
তিনি বলেন, ভ্যাকসিন নেওয়ার ব্যাপারে অনেকের একটু দ্বিধা দ্ব›দ্ব ছিল তবে সাহসী ভূমিকা রেখেছে কুমুদিনী হাসপাতালের নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা। আর এখন আল্লাহর রহমতে কোনো সমস্যা নাই। সবাই খুব আগ্রহ আর উৎসাহ নিয়ে ভ্যাকসিন নিতে চলে আসছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের মেয়াদে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে কর্মসূচি বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করেন। পাশাপাশি, করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণের ক্ষেত্রে নিবন্ধন প্রক্রিয়ার কথাও তুলে ধরে তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা তিন কোটি ভ্যাকসিন কিনে রেখেছি। তখনও রিসার্চ চলছে। তখনও ডবিøউএইচও অনুমোদন করেনি। কিন্তু আমি অ্যাডভান্স দিয়ে রেখেছি এই কারণে যে, শুরুতেই যেন আমরা ভ্যাকসিন পেতে পারি। কারণ আমরা অনেক ঘন জনবসতির দেশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার দেশের মানুষের সুরক্ষা তাছাড়া যারা চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে বা মানুষের পাশে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যারা থাকছে, তাদের জন্য ভ্যাকসিন সব থেকে বেশি প্রয়োজন। সেই লক্ষ্য নিয়েই এটা আমরা করেছি, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, ভারত আমাদের ২০ লাখ ভ্যাকসিন উপহার দিয়েছে। আরও অন্যান্য দেশ দিতে চাচ্ছে। আমরা সবই নেব, যাতে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত এই ভ্যাকসিন দিতে পারি। আমরা সেই ব্যবস্থা করব। করোনা চিকিৎসা ও করোনাকালে মানুষের সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, চিকিৎসাকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী, প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারী এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীসহ যারা মানুষের সেবা করে যাচ্ছে তাদের প্রতিও আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরিবারের সবাইকে হারিয়ে আমি যখন বেঁচে যাই, এতগুলো শোক সহ্য করা খুবই কঠিন; তারপর শুধু এটুকুই চিন্তা করেছি যে জাতির জন্য সারাটা জীবন আমার বাবা সংগ্রাম করেছেন, জেল জুলুম অত্যাচার সহ্য করেছেন, নিজের জীবনের কোনও চাওয়া পাওয়া ছিল না, এমনকি আমার মা‘ও না। সম্পূর্ণভাবে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিল দেশের মানুষের জন্য। আর সেই মানুষগুলি স্বাধীনতা পাওয়ার পর ভাগ্যহারা থাকবে, কষ্ট ভোগ করবে, ক্ষুধার অন্ন জোগাতে পারবে না, চিকিৎসা পাবে না, শিক্ষা পাবে না, উন্নত জীবন পাবে না; এটা হতে পারে না। এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা এবং তাদের জীবনটা উন্নত করার এটাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। সেজন্য যতোটুকু যা করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমরা অনেক ক্ষেত্রে পিছনে পড়ে গিয়েছিলাম। বাংলাদেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে নার্সদের শুধু ডিপ্লোমা নার্সিং ছিল, গ্রাজুয়েশন ছিল না। ‘৭৫ সালের পর ২১ বছর যারা সরকার পরিচালনা করেছিল একে তো অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল। তারপর ক্ষমতাটা তাদের কাছে ছিল একটা ভোগের বস্তু, নিজের ভাগ্য গড়ার বস্তু, দেশের মানুষের কল্যাণ করার কথা তারা কখনও চিন্তা করে নাই। এটাই হচ্ছে সব থেকে দুর্ভাগ্যের। আমরা সরকারে আসার পর থেকে এ ব্যাপারে যথেষ্ট প্রচেষ্টা চালাই
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রতিটি জেলায় সরকারি অথবা বেসরকারি উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি, মেডিকেল কলেজ করে দেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছি, উন্নত মানের হাসপাতাল করে দিচ্ছি। ডাক্তার নার্স নিয়োগ দিয়েছি। করোনাভাইরাস যখন এসেছে করোনাভাইরাস মোকাবেলা করার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে সাত দিনের মধ্যে ২ হাজার ডাক্তার ৬ হাজার নার্স টেকনিশিয়ান নিয়োগ দিয়েছি। ভবিষ্যতে আরও নিয়োগের পদক্ষেপ নিয়েছি। যেন আমাদের দেশের মানুষ অন্তত এই চিকিৎসাটা পায়, তার ব্যবস্থা আমরা নিয়ে এসেছি। করোনাভাইরাস মোকাবেলা করার জন্য যা যা করা দরকার আমরা তা করে যাচ্ছি, চেষ্টা করে যাচ্ছি, আমাদের পদক্ষেপের ফলে করোনাভাইরাস অনেকটা নিয়ন্ত্রণে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিকিৎসা বিজ্ঞান বিশেষ করে ক্যান্সারের ওপর আরো গবেষণায় গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, দেশের পরিবেশ এবং জলবায়ুর সাথে ক্যান্সার কিভাবে বিস্তার লাভ করে সেজন্য গবেষণা দরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে গবেষণার সুযোগ খুবই কম। বিশেষ করে চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা খুব বেশি একটা হচ্ছেনা। যেটা হওয়া একান্তভাবে প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, ‘ক্যান্সার এমন একটা রোগ এবং যেভাবে এর প্রাদুর্ভাব হচ্ছে তার সেভাবে ডায়াগনোসিস আমাদের দেশে হচ্ছে না। দেশের পরিবেশ এবং জলবায়ুর সাথে এই ক্যান্সার কীভাবে বিস্তার লাভ করে সেটার চিকিৎসার জন্য যে গবেষণা দরকার সেটা আমাদের দেশে খুব কমই হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ‘৯৬ সালে সরকার গঠনের পর রিসার্চের জন্য অনেকগুলো ইনস্টিটিউট তৈরি করে দিয়েছিলাম এবং পরবর্তীতে ক্ষমতায় এসে সেগুলোকে আরো উন্নত করার পাশাপাশি আরো নতুন ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি। কারন গবেষণা আমাদের জন্য একান্ত অপরিহার্য।
শেখ হাসিনা বলেন, কুমুদিনী ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সাইন্স এন্ড ক্যান্সার রিসার্চ’ শীর্ষক এই সেন্টারটা যখন তৈরি হবে তখন এদেশে ক্যান্সার চিকিৎসার সুযোগ মানুষ আরো ভালভাবে পাবে। কারণ দেশের সকল মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, দেশের সকল বিভাগে অন্তত একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সকল বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হলে সেখানে রিসার্চের সুযোগ হবে। তবে, আমি মনে করি যে, বেসরকারি খাতকে সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত যখন ক্ষমতায় আসে তাদের একটা কাজই ছিল আমরা যা কিছু করেছি সবগুলি বাতিল করে দেওয়া বা সেগুলো স্থগিত রাখা। ঠিক সেরকম একটা সমস্যায় পড়ে গিয়েছিল। যা হোক আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সেগুলো আবার হচ্ছে।
দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, ভ্যাকসিন দেওয়ার পরেও সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলতে হবে, মাক্স পরে থাকতে হবে হাত ধুতে হবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। যারা ভ্যাকসিন নিচ্ছি সাথে সাথে যেন স্বাস্থ্যসুরক্ষাটা মেনে চলি। তাহলে আমরা আশা করি আমাদের দেশ থেকে এই প্রাদুর্ভাব পুরোপুরি চলে যাবে। ##