করোনামুক্ত হয়ে যা বললেন রায়পুরের ইউএনও সাবরীন চৌধুরী

532

ছবি (সংগৃহীত) : সাবরীন চৌধুরী, ইউএনও, রায়পুর

মিরর বাংলাদেশ :  অবশেষে করোনামুক্ত হলেন লক্ষীপুরের রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরীন চৌধুরী। সোমবার তিনি করোনা নেগেটিভ হওয়ার খবর পেয়েছেন। মাঠ  প্রশাসনের এই চৌকস কর্মকর্তা সরকারি নির্দেশনা পালনে রায়পুর উপজেলায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তার দায়িত্ব পালনের সুনাম রায়পুরের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে।

রায়পুরের সাধারণ মানুষ বলছেন,একজন সাবরীন চৌধুরী সরকারি সেবার মাধ্যমে পাল্টে দিয়েছেন রায়পুরকে। মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছেন সরকারের সকল সুযোগ সুবিধা। মানুষও  সুফল পাচ্ছেন।

করোনা মুক্ত হয়ে ফেসবুকে তিনি স্ট্যাটাস দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তাদের কাছে,  করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর যারা তার পাশে ছিলেন।

নিচে ইউএনও সাবরীন চৌধুরীর ফেসবুক স্ট্যাটাস হুবহু তুলে ধরা হলো।

 

আলহামদুলিল্লাহ..!! অবশেষে আল্লাহর অশেষ রহমতে করোনা নেগেটিভ হলাম। কোন নেগেটিভ খবর মনে হয় এতো আনন্দ নিয়ে আসতে পারে না, যেটা আজ পেলাম!

গতবছর করোনা যুদ্ধে সবাইকে নিরাপদ ও সুস্থ রাখার ব্রতে রাতদিন ছুটে বেড়িয়েছি, অসুস্থতা অনুভব করলেও মনে মনে সামলে নিয়েছিলাম, তবুও টেস্ট করাই নি, পাছে আমার মনোবল নষ্ট হয়ে যায়! কিন্তু এবার নিজের অসুস্থতাকে যতই ইগনোর করতে চাচ্ছিলাম, সে যেন ততই ঝেঁকে বসছিল। অজ্ঞতা উপায় না দেখে অসুস্থ বাবা, মা এবং ছোট্ট ত্রিরাভ এর কথা চিন্তা করেই টেস্ট করিয়েছিলাম। রিপোর্টে করোনা পজিটিভ শুনে এক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে যাই। নিজ পরিবারকে জানানোর আগে প্রথম ফোন দিয়ে শ্রদ্ধেয় জেলা প্রশাসক, লক্ষ্মীপুর মহোদয়কে অবগত করেছিলাম। শ্রদ্ধেয় স্যারের সাথে কথা বলে মনের সাহস ও মনোবল অনেকখানি বেড়ে গেল। এরপর ডিডিএলজি স্যারের সাথে কথা বলে, আমার সিনিয়র, ব্যাচমেট এবং অনুজ সহকর্মীদের ফোন পেয়ে ভয় পুরোটাই কেটে গেল। অসংখ্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা লক্ষ্মীপুর জেলার মান্যবর জেলা প্রশাসক, DC Lakshmipur লক্ষ্মীপুর জেলার পুরোধা, অনন্য ব্যক্তিত্ব, দক্ষ প্রশাসক, আমাদের প্রকৃত অভিভাবক জনাব মোঃ আনোয়ার হোছাইন আকন্দ স্যার-এঁর প্রতি। শ্রদ্ধেয় স্যার যে শুধু প্রতিনিয়ত আমার এবং আমার পরিবারের খোঁজ নিয়েছেন তা নয়, দ্রুত আরোগ্য কামনায় জুনিয়রের প্রতি স্যারের আন্তরিকতা, স্নেহ ও ভালোবাসামিশ্রিত দাওয়া (স্বাস্থ্যকর খাবার) পাঠানোর পাশাপাশি শ্রদ্ধেয় স্যার আমার ছোট্ট ত্রিরাভকে খুশি রাখতে তার জন্যও গিফট পাঠিয়েছিলেন। শ্রদ্ধেয় স্যারের এমন বদান্যতা, মহানুভবতা, আন্তরিকতা এবং ভালোবাসার নিদর্শন আমার সারা জীবনে পাথেয় হয়ে থাকবে। কৃতজ্ঞতা মমতাময়ী শ্রদ্ধেয় ডিসি ভাবীর প্রতি, একান্তভাবেই আপনজনের মতো পাশে থাকার জন্য।

বাসায় আমার বাবা-মা অসুস্থ, আমি আইসোলেশনে, ওদিকে সাভারে আমার শশুড় করোনায় আক্রান্ত হয়ে হসপিটালাইজড, শাশুড়ি বাসায় করোনায় আইসোলেশনে…ফেসবুকে রোজ পরিচিত-অপরিচিত মানুষের মৃত্যুর খবর….সব মিলিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলাম, ভয়াবহ অবস্থায় কেটেছে এই ক’টা দিন।

এই দুঃসময়ে মনোবল দৃঢ় রাখতে প্রতিনিয়ত খোঁজ নিয়েছেন জনাব সম্পদ বড়ুয়া স্যার, সচিব, জনবিভাগ, রাষ্ট্রপতির কার্যালয় (যিনি লক্ষ্মীপুর জেলায় করোনা পরিস্থিতি মনিটরিং এবং সার্বিক দায়িত্বে আছেন)। স্যারের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। কৃতজ্ঞতা মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের কোভিড সংক্রান্তে জেলা-উপজেলার সমন্বয়কারী সকল সিনিয়র স্যারদের প্রতি যারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে মনোবল শক্ত রাখতে প্রতিনিয়ত সাহস এবং পরামর্শ দিয়েছেন। অশেষ কৃতজ্ঞতা শ্রদ্ধেয় Anjon Paul স্যার, প্রিয় বৌদি Silpe Pal (দূরে থেকেও স্যার এবং বৌদি সবসময় খোঁজখবর নিয়েছেন), জনাব Shafiuzzaman Bhuiyan স্যার, Shahidul Islam Masud স্যার, Shamim Shanti স্যার, উপজেলা প্রশাসন লক্ষ্মীপুর সদর স্যার, Ndc Lakshmipur, AC Land Raipur Lakshmipur, Uno Ramgati Lakshmipur Uno Ramganj Lakshmipur Uno Kamalnagar এবং সকল অনুজ সহকর্মীদের প্রতি।

অসংখ্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা রায়পুর উপজেলার সকল সেক্টরের, সকল প্রান্তের জনগণের প্রতি। বিশেষ করে কৃতজ্ঞতা জেলা আওয়ামীলীগ এর সাধারণ সম্পাদক জনাব Adv Nuruddin Chowdhury Noyon মহোদয়, উপজেলা পরিষদের সম্মানিত চেয়ারম্যান Principal Mamunur Rashid, সম্মানিত মেয়র, রায়পুর পৌরসভা, ভাইস চেয়ারম্যান Adv Maruf Bin Zakaria, স্পিনা রানী প্রামাণিক রায়পুর সার্কেল লক্ষ্মীপুর, অফিসার ইনচার্জ রায়পুর থানা লক্ষ্মীপুর, Zakir Hossain উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, রুবেল ভাট (বিশিষ্ট সমাজসেবক), পৌরসভার কাউন্সিলরবৃন্দ, রায়পুর উপজেলার সকল ইউনিয়নের সম্মানিত চেয়ারম্যানবৃন্দ, বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, Kazi Bakki Billah উপজেলা পরিষদের সকল কর্মকর্তাবৃন্দ, আমার প্রিয় সহযোদ্ধাগণ, Saleh Uddin, সোনালি ব্যাংকের ম্যানেজার, বায়েজীদ ভূইঁয়া, রায়পুর ফায়ার স্টেশন, রায়পুর আনসার ওভিডিপি লক্ষীপুর, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ, Mahbubur Rahman, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, সেচ্ছাসেবককর্মী, গ্রামপুলিশ বাহিনী, গ্রীন লক্ষ্মীপুর, সকল গ্রুপের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সকল সাংবাদিকবৃন্দ (যারা নিজ নিজ টাইমলাইন এবং পত্রিকার নিউজে আমার জন্য দোয়া চেয়েছেন), মসজিদ ও মন্দির কমিটির সভাপতি- সম্পাদকগণ, Faisal Azim, আমার অফিসের সকল স্টাফ, আমার সরকারি গাড়ির পাইলট (খোকন ড্রাইভার), যাদের সাথে কাজ করি সে-সকল ঠিকাদারবৃন্দ, আমার খুব কাছের প্রতিবেশী Maria Munna (সার্বক্ষণিক ছোট বোনের মতো সকল সমস্যায় নি:স্বার্থভাবে সহযোগীতায় হাত প্রসারিত করছে), শালুক ডরমিটরির নীচতলার সহযোদ্ধাসহ সর্বোপরি আমার ভূমি পরিবারের সকল সদস্যদের এর প্রতি। অবশ্যই ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা আমার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, ব্যাচমেট-কলিগদের প্রতি।

স্পেশাল ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা ডাঃ রাশেদুন নবী হাসান, যিনি প্রতিনিয়ত আমার এবং আমার পরিবারের খোঁজ নিয়েছেন এবং প্রতিনিয়ত পরিবারের সকল অসুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে করনীয় সম্পর্কে পরামর্শ প্রদানের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রেসক্রাইব করেছেন। অসংখ্য ধন্যবাদ মাতৃছায়া ক্লিনিকের তুহিন চৌধুরী যিনি রাত কিংবা দিনে যে কোন প্রয়োজনে নিঃস্বার্থভাবে তাৎক্ষনিক রেসপন্স করেছেন এবং করে থাকেন। ধন্যবাদ পরিষদের পাশের ফার্মেসী’র মিলন সাহেবকে যিনি প্রতিদিন দু’বেলা করে করোনা বাড়িতে এসে আমার আব্বা এবং আম্মাকে ইনজেকশন দিয়ে যেতেন, এছাড়াও অসুস্ততার সময় যারা সর্বদা খোঁজ খবর নিয়েছেন, প্রীতি উপহার পাঠিয়েছেন, যার যার অবস্থান হতে দোয়া করেছেন, সাহস যুগিয়েছেন, সবার নাম উল্লেখ করতে না পারলেও সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং আন্তরিক ধন্যবাদ।

আপনাদের সকলের দোয়া, সহযোগিতা এবং ভালোবাসায় মহান রাব্বুল আলামীন এ যাত্রায় আমাকে আপনাদের মাঝে আবার ফিরিয়ে এনেছেন। আমার ভালোবাসা আক্ষরিক অর্থেই রায়পুরবাসীর ভালোবাসার নিকট পরাজিত হয়েছে। আমি একজন সাধারণ চাকুরীজীবি হিসেবে চেষ্টা করি মননে, অভ্যাসে, আচরণে, সহমর্মিতায়, নিয়মে আমার কর্মস্থলের মানুষের পাশে থাকতে। কখনো পারি, হয়তো অনেক ক্ষেত্রেই পারিনা। সীমাবদ্ধতা মেনে নেই… নিজের, সিস্টেমের, পারিপার্শ্বিকের, অসহযোগিতার। তবু কর্মস্থলটাকে হৃদয়ের একপাশে আগলে রাখি। জেনে রাখি আমার রিজিক এখান থেকেই আসে। এটি আমার দ্বিতীয় প্রার্থনাস্থল। যদি পারেন বিশ্বাস রাখবেন, আমি কোনদিন যদি দূরে সরে গিয়েছি তো কর্তব্যের দায়ে, আপনার প্রতি অবহেলায় নয়। রায়পুরের প্রতিটি পথ-প্রান্তরে যার সাথে যেখানে ন্যুনতম বন্ধন তৈরি হয়েছে, তাতে আমার শ্রদ্ধা শতভাগ।

সকলের মঙ্গল কামনায়……

ধন্যবাদান্তে
সাবরীন চৌধুরী
উপজেলা নির্বাহী অফিসার
রায়পুর, লক্ষ্মীপুর।