এক যুগ আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয় : প্রধানমন্ত্রী

385
ছবি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ফাইল ছবি)

*  আল-জাজিরা নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া ও কিছু বলার নেই *  কারও মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অসন্তোষ তৈরি করাও কাম্য নয়  * নির্বাচনের নির্ধারিত সময় এলে অংশগ্রহনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত

মিরর বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এক যুগ আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।
শনিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এলডিসি থেকে উত্তরণে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে সাংবাদিক সম্মেলনে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে যুক্ত হন।
গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে উপস্থিত আছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
গণভবন প্রান্তে সভা পরিচালনা করছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রান্তে সভা পরিচালনা করছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর্থিক এবং অন্যান্য সূচকগুলোর দিকে লক্ষ্য করুন। ২০০৮-০৯ বছরে জিডিপির আকার ছিল মাত্র ১০৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৯-২০ সালে তা ৩৩০ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এই ১২ বছরে সরকারি ব্যয় ৪ দশমিক ৭ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৮৭ হাজার ৯৬০ কোটি থেকে ২০১৯-২০ বছরে ৪ লাখ ১৫ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা হয়েছে। ২০০৮-০৯ বছরে রফতানি আয়ের পরিমাণ ছিল ১৫ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার। আর ২০১৮-১৯ বছরে তা ৪০ দশমিক পাঁচ-চার বিলিয়ন ডলারে বৃদ্ধি পায়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০০৮-০৯ বছরের ৭ দশমিক চার-সাত বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৪৪ দশমিক শূন্য-তিন বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০০১ সালে আমাদের দেশের দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৮ দশমিক ৯ শতাংশ এবং হত-দারিদ্র্যের হার ছিল ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১৯ সালে দারিদ্র্যের হার কমে দাঁড়িয়েছে শতকরা ২০ দশমিক ৫ ভাগ এবং হত-দারিদ্র্যের হার ১০ দশমিক ৫ শতাংশে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ স্বয়ং-সম্পূর্ণ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন। বাংলাদেশ বিশ্বে ধান উৎপাদনে ৩য় এবং মাছ-মাংস, ডিম, শাকসবজি উৎপাদনেও স্বয়ং-সম্পূর্ণ। অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে এবং ইলিশ উৎপাদনকারী ১১ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম। ২০০৯-১০ বছরে বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ছিল মাত্র ৫ হাজার ২৭১ মেগাওয়াট। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৪ হাজার ৪২১ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ৪৭ থেকে ৯৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।’
পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, নির্বাচনের নির্ধারিত সময় এলে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল-জাজিরায় সম্প্রতি বাংলাদেশকে নিয়ে প্রচারিত তথ্যচিত্র নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আল-জাজিরা নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। কিছু বলারও নেই। একটি চ্যানেল কী করছে না করছে, দেশবাসী বিচার করে দেখবে। দেশের মানুষ বিচার করে দেখবে।
কারও মৃত্যুকে ঘিরে সরকারবিরোধী অসন্তোষ তৈরির চেষ্টা কাম্য হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, কারও মৃত্যুই কাম্য নয়। কিন্তু কারও মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অসন্তোষ তৈরি করাও কাম্য নয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ যখন গড়েছি, তখন ডিজিটাল বিশ্বে নিরাপত্তা দেওয়াও সরকারের কাজ।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আইনের প্রয়োগ হচ্ছে নাকি অপপ্রয়োগ হচ্ছে তা দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। এটি আপেক্ষিক বিষয়। আইন নিজ গতিতে চলছে এবং চলবে।
দেশের জনগোষ্ঠীর একটি নির্দিষ্টসংখ্যক অংশকে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ভ্যাকসিন দেওয়ার পর বেঁচে থাকলে তারপরই কেবল এই ভ্যাকসিন নেবেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জন্য এ উত্তরণ এক ঐতিহাসিক ঘটনা। এ কৃতিত্ব দেশের আপামর জনসাধারণের। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এই মাইলফলক অর্জন করতে পেরেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পূর্ণ যোগ্যতা অর্জন করেছি। সমগ্র জাতির জন্য এটি অত্যন্ত আনন্দের ও গর্বের। আমাদের এই উত্তরণ এমন এক সময়ে ঘটলো যখন আমরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি, আমরা মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের দ্বারপ্রান্তে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে টেনে তুলে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে নিয়ে গিয়েছিলেন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে তারই হাতে গড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত করলো।
এই অর্জনের জন্য বাংলাদেশের সব নাগরিক ও উন্নয়ন সহযোগীদের ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এই শুভ মুহূর্তে আমি দেশ ও দেশের বাইরে অবস্থানরত বাংলাদেশের সব নাগরিককে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। জাতির পিতার কন্যা হিসেবে, জনগণের একজন নগণ্য সেবক হিসেবে এই কৃতিত্ব অর্জনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি।

এলডিসি থেকে উত্তরণের এই অর্জনকে দেশের নতুন প্রজন্মকে উৎসর্গ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি এই অর্জনকে উৎসর্গ করছি আমাদের দেশের নতুন প্রজন্মকে, যারা আজকের বাংলাদেশকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মানবসম্পদ, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুরতা এই তিনটি সূচকের ভিত্তিতে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়টি পর্যালোচনা করে। এর ফলে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম ত্রি-বার্ষিক পর্যালোচনা সভায় বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের তিনটি মানদÐ খুব ভালোভাবে পূরণ করে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করলো।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতিসংঘের পর্যালোচনায় ২০১৯ সালে মাথাপিছু আয়ের মানদÐ নির্ধারিত ছিল ১ হাজার ২২২ মার্কিন ডলার। ওই বছর বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৮২৭ ডলার। আর বর্তমানে আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬৪ ডলার। অর্থাৎ মানদÐের প্রায় ১.৭ গুণ। মানবসম্পদ সূচকে নির্ধারিত মানদÐ ৬৬-এর বিপরীতে বাংলাদেশের অর্জন ৭৫ দশমিক চার। অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুরতা সূচকে উত্তরণের জন্য মানদÐ নির্ধারিত ছিল ৩২ বা তার কম। কিন্তু ওই সময়ে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ২৭।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ২০২০ সাল শুধু আমাদের জন্য নয়, গোটা বিশ্বের জন্য ছিল সংকটময়। এ মহামারিতে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করে তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে টিকা প্রদান শুরু করেছি, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৮ লাখ ৫০ হাজার ৯৪০ জনকে প্রথম টিকা প্রদান করা হয়েছে। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এখন পর্যন্ত আমরা ১ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি, যার জিডিপির ৪. ৪৪ শতাংশ।’
তিনি বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তোলনের ফলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ একটি প্রত্যয় ও মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে জায়গা করে নেবে।’
বাঙালি বীরের জাতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মাত্র নয় মাসে আমাদের স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে এনেছেন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করিÍআমাদের এই উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত থাকলে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে একটি উন্নত সমৃদ্ধ মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।’