এনবিআরে বিতর্কিতদের পদোন্নতি নিয়ে নানা প্রশ্ন

210

মিরর বাংলাদেশ : জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তি ও পুনর্গঠন নিয়ে চলমান উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যেই দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তাধীন এক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়ায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। সদ্য ঘোষিত পদোন্নতিতে গ্রেড-২ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মোহাম্মদ বেলাল হোসেন চৌধুরী, যিনি বর্তমানে এনবিআরের ভ্যাট ও আয়কর সংশ্লিষ্ট শাখায় কর্মরত।

অভিযোগ রয়েছে এনবিআর অস্থিরতার মস্টারমাইন্ড সদস্য বেলাল হোসেন চৌধুরীর। এই পদোন্নতি এমন এক সময় এলো, যখন এনবিআরের অস্থিরতা তৈরীর কারনে বিভিন্ন কর্মকর্তাদের বাধ্যতামুলক ভাবে অবসরে পাঠানো হচ্ছে। বেলাল হোসেন চৌধুরীর পদোন্নতির ব্যাপারে অনেকের মধ্যেই নেতিবাচক প্রক্রিয়া লক্ষ্য করাগেছে। সংশ্লিষ্ঠলা বলছেন মোহাম্মদ বেলাল হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন’ এবং ‘রাজস্ব ফাঁকির সঙ্গে সম্পৃক্ততা’ ইত্যাদি অভিযোগে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। এ ছাড়া তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞাও জারি রয়েছে।

এসব সত্ত্বেও তাকে এনবিআরের গুরুত্বপূর্ণ গ্রেড-২ পদে সুপারিশ করায় এনবিআর কর্মকর্তাদের একটি অংশ হতাশা প্রকাশ করেছেন। দুদকের নথি অনুযায়ী, বেলাল হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের শেষদিকে একাধিক অভিযোগ জমা পড়ে। এসব অভিযোগে বলা হয়, তিনি একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিপুল অর্থের মালামাল খালাস করেছেন এবং নিজের ও আত্মীয়-স্বজনের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ গড়ে তুলেছেন। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক তাকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেয়। এনবিআর বিলুপ্তি করে পৃথক দুটি বিভাগ গঠনের খসড়া অধ্যাদেশ জারি হলে ১২ মে থেকে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ ব্যানারে দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু করেন। এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে অনশন, কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। সরকারি প্রশাসন কার্যত অচল হয়ে পড়ে এবং আয়কর, ভ্যাট, কাস্টমস বিভাগে চরম স্থবিরতা তৈরি হয়। এ আন্দোলনের প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন এনবিআর সদস্য মোহাম্মদ বেলাল হোসেন চৌধুরী। সাম্প্রতিক সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) চারজন কর্মকর্তাকে এনবিআরের গ্রেড-২ সদস্য পদে পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করে। এদের মধ্যে রয়েছেন মোহাম্মদ বেলাল হোসেন চৌধুরী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের এক যুগ্ম কমিশনার বলেন, “দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তাধীন একজন কর্মকর্তাকে এমন উচ্চ পদে পদোন্নতি দেওয়া আমাদের জন্য হতাশাজনক। এটা শুধু নিয়মবহির্ভূত নয়, বরং আন্দোলনকারীদের মনোবল ভাঙার একটি প্রচ্ছন্ন কৌশল।” সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত এক উপকমিশনার বলেন, “আমরা আন্দোলন করেছি রাজস্ব প্রশাসনকে রাজনীতিমুক্ত ও পেশাগতভাবে দক্ষ রাখার জন্য। কিন্তু এই পদোন্নতি প্রমাণ করে, সরকারের উদ্দেশ্য আলাদা, এবং সেখানে ন্যায়বিচার অনুপস্থিত।” সংশ্লিষ্ঠরা বলছেন, জনপ্রশাসন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ থাকা অবস্থায় পদোন্নতি অনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।

তারা মনে করেন, এটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং এর মাধ্যমে ভুল বার্তা যায় মাঠপর্যায়ে। এনবিআরের সংস্কার আন্দোলনের উত্তপ্ত পরিবেশে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত এক কর্মকর্তার পদোন্নতি শুধু কর্মচারীদের মধ্যেই নয়, প্রশাসনিক বিশ্লেষকদের মধ্যেও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। এতে প্রশাসনের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধের প্রতিশ্রুতি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন। এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর ঐক্য পরিষদের আন্দোলনে বাংলাদেশ কাস্টমস ও ইনকাম ট্যাক্স কর বিভাগের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সাসপেন্ড করেছেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান একজন চিহ্নিত আওয়ামী লীগের সরকারের দোসর চিহ্নিত স্থানে রয়েছে। কিছু চিহ্নিত বিগত দিনের সরকারের দোসর এখনো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর পরিচালনা করছেন। যে সব কর্মকর্তার পরিকল্পনায় আন্দোলন পরিচালিত হয় এদের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর সদস্য বেলাল হোসেন চৌধুরী ও মোয়াজ্জেম হোসেন এবং মোস্তাফিজুর রহমান অন্যতম। এসব কর্মকর্তারা বাংলাদেশ কাস্টমস রাজস্ব কর্মকর্তা সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা করে বাকাএভের সংগঠন নেতা মজিবুর রহমান মজিবকে ব্যবহার করে বিভিন্ন মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করছেন। এর একটি প্রমাণস্বরূপ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে অবস্থিত বাকাএভ এর নামে একটি সংগঠন রয়েছেন। এ সংগঠনের সরকারি কোন নিবন্ধন নেই। একই সাথে চেয়ারম্যানেরও কোন অনুমোদন নেই। বাকাএভ সংগঠন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একটি বড় কক্ষ যা ১৪০০ স্কয়ার ফিট দখল করে আছেন। বাকাএভের নেতা মুজিবর রহমান মজিব একজন রাজস্ব কর্মকর্তা। সে তার নিজের কর্মস্থলে না গিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে চেয়ারম্যান মেম্বার সদস্যগণের কক্ষে বিভিন্ন তদবির করেন।তিনি এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীর বদলি বাণিজ্যের দালালি করে আসছেন। এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ঐক্য পরিষদের আন্দোলনে কর্মকর্তা কর্মচারীকে আন্দোলনে উস্কানিমূলক দিয়ে আসছিলেন। আন্দোলনকারীর ফুটেজ দেখা যায় বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা আন্দোলনে অংশগ্রহন করলেও হাতে গোনা কয়েকজনাকে অবসর দেয়া হয়েছে। এবং কিছু সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সাসপেন্ড করেছেন। যারা সামনের কাতারে ছিলেন এবং পিছনে যারা উস্কানি দিয়েছেন তাদেরকে কেন সাসপেন্ড করা হয়নি এবিষয়ে কর্মকর্তা, কর্মচারিদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। সংশ্লিষ্ঠদের সাথে কথা বলে জানা যায় যে সব কর্মকর্তা আন্দোলনে গুরত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করেছে তাদের মধ্যে রয়েছে মোঃ মজিবুর রহমান মজিব, কাস্টমস রাজস্ব কর্মকর্তা( বাকাএভ নেতা ), মোঃ মাজহারুল ইসলাম কাস্টমস রাজস্ব কর্মকর্তা (বাকাএভ নেতা), মোঃ আলহেলাল তাজ সিপাই, কাস্টমস ঢাকা দক্ষিণ কমিশনারেট (বাকাস মহাসচিব) মোঃ মাহবুব হোসাইন সাব ইন্সপেক্টর (বাকাস সহ-সভাপতি) কাস্টমস ঢাকা পূর্ব কমিশনারেট, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন সিপাই (সাংগঠনিক সম্পাদক) কাস্টমস পশ্চিম কমিশনারেট, মোঃ বাবুল হোসেন সিপাই (বাকাস নেতা) কাস্টমস ঢাকা দক্ষিণ কমিশনারেট, মোঃ আবুল হোসেন সিপাই (সাংগঠনিক সম্পাদক) কাস্টমস বৃহত্তর করদাতা ইউনিট এল টি ইউ ঢাকা, মোঃ মনজুরুল ইসলাম সিপাই (আঞ্চলিক কমিশনারেট নেতা) কাস্টমস ঢাকা দক্ষিণ কমিশনারেট, মোঃ আবুল কাশেম তুহিন সিপাই (আঞ্চলিক কমিশনারেট নেতা) কাস্টমস ঢাকা দক্ষিণ কমিশনারেট, মোঃ রাজিব হোসেন সিপাই (সাংগঠনিক সম্পাদক) কাস্টমস ঢাকা দক্ষিণ কমিশনারেট, মোঃ আবু সাঈদ সিপাই (বাকাস নেতা) কাস্টমস ঢাকা পশ্চিম কমিশনারেট ঢাকা, মোঃ মিজানুর রহমান সাব ইন্সপেক্টর কাস্টমস আঞ্চলিক (কমিশনার নেতা) ঢাকা দক্ষিণ কমিশনারেট