`গ্যাস এখন বিরাট সঙ্কটে রয়েছে’

273

নারায়ণগঞ্জে সিসি ক্যামেরার সাহায্যে তিতাসের মনিটরিং কার্যক্রমের উদ্বোধন

*  গ্যাস সংকট আমাদের তৈরী না : ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী
*  অবৈধ গ্যাস সংযোগে কেউ জড়িত থাকলে দ্বিগুন সাজা হবে : পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান
*  নারায়ণগঞ্জে ১ লাখ ২৩ হাজার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি : তিতাস এমডি
*  আমার জেলায় সবচেয়ে বেশি অবৈধ সংযোগ ,এটা লজ্জার : ডিসি নারায়ণগঞ্জ

মিরর বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ,জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেছেন, আমাদের গ্যাস এখন বিরাট সঙ্কটে রয়েছে । এটা কিন্তু আমাদের তৈরি না। আজকে যদি ইউক্রেনে যুদ্ধ না লাগতো আর আকাশচুম্বী দাম না হতো তাহলে আপনারা এ সংকট টের পেতেন না। বাংলাদেশে কোনো রকম অভাব হতো না। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অভাব হতো না। ইউরোপীয়ান যুদ্ধের কারণে খেসারত আমরা দিচ্ছি।
মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এর আওতাধীন এলাকায় স্থাপিত সিসি ক্যামেরার সাহায্যে মনিটরিং কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জ্বালানী উপদেষ্টা বলেন, আকাশচুম্বী দাম যতদিন থাকবে ততদিন আমাদের সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ থাকবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন করার ক্ষমতা ও গ্যাস সরবরাহ করার সব ব্যবস্থা আমাদের আছে। দেশে বিভিন্ন রকম বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। এই খরচ বাড়তাছে-কমতাছে বিষয় এটা নয়। এখন মুখ্য সঙ্কটবাদী চ্যালেঞ্জ আমাদের সাথে। সেটা হলো আকাশচুম্বী দাম। আমাদের আয় অনুযায়ী সেভাবে আমাদের থাকতে হবে। গ্যাস নিয়ে কোনো বে আইনী কাজ করা যাবে না।
সকলের সহযোগিতা কামনা করে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন বর্তমান পরিস্থিতি একটা যুদ্ধ। এই যুদ্ধ মোকাবেলায় সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। আপনারা যদি সহযোগিতা না করেন তাহলে কিছু হবে না।
তিনি আরও বলেন, যারা অবৈধ কানেকশন ও বাণিজ্য করবে তাদেরকে আপনারা বরদাস্ত করবেন না। তিতাস যেহেতু এখানে কাজ করে আপনারা তিতাসকে সহযোগিতা করবেন। তারা অনেক সময় বিপদের সম্মুখীন হয় আপনারা তাদের পাশে থাকবেন। অবৈধ গ্যাস যদি আমরা কমাতে পারি তাহলে বৈধকারিরা একটু গ্যাস বেশি পাবেন।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান বলেন, অবৈধ গ্যাস সংযোগের সাথে তিতাস কিংবা পেট্রোবাংলার কেউ জড়িত থাকলে তার দ্বিগুন সাজা হবে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও ফৌজদারী মামলা করা হবে।তার চাকরির ক্ষেত্রে যেমন সমস্যা হবে তার সাজাও হবে। এক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও চুরির অভিযোগ আনা যাবে বলে মন্তব্য করেন।
তিনি আরো বলেন, এখন থেকে অবৈধ গ্যাস সংযোগের ক্ষেত্রে জরিমানার পাশাপাশি সাজাও হবে। ম্যাজিষ্ট্রট যেভাবে চাইবেন সাজা দিতে পারবেন। অপরাধ প্রথমবার করলে ৩মাসের কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমান এবং ২য়বার করলে সাজা ও জরিমানা দ্বিগুন হবে।
তিতাসের এমডি হারুন অর রশীদ মোল্লা বলেন, শিল্প মালিকদের জন্য আমি গ্যাস দেই। বৈধ কাস্টমারদের গ্যাস দেই, পাইপ লাইন করেছি। এখানে চারটা ইন্ডাস্ট্রি কিন্তু চার হাজার অবৈধ চলে গেছে। এগুলো কি আপনার সম্পত্তি না, আপনিও এটার মালিক। তাহলে আপনি কেন পাহাড়া দেবেন না? আমাদের কাজ করতে হবে। কাজ না করলে আপনারাও গ্যাস পাবেন না।
হারুন অর রশীদ বলেন, আমার এখানে ছয় মাসের তথ্য আছে। আমি দুই লাখ ২৩ হাজার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জেই এক লাখ ২৭ হাজার। আমাদের এই অবৈধ সংযোগগুলোকে শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে। রূপগঞ্জে আমাদের চারটা গাড়ি ভাঙা হয়েছে। আমি সেখানে মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি এমনভাবে টাইড হয়েছেন সেখানকার সকল অবৈধ সংযোগ খুলে ফেলা হয়েছে।
তিনি বলেন, আপনারা এই অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদ করে উদাহরণ সৃষ্টি করুন। যে নারায়ণগঞ্জে কোনো অবৈধ সংযোগ নেই। আপনারা আমাদের সহযোগিতা করুন। আমাদের কোনো কর্মকর্তা জড়িত থাকলে, আমাদের জানান।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, আমার জেলায় সবচেয়ে বেশি অবৈধ সংযোগ। তাই একটু মন খারাপ হয়েছে, লজ্জা পেয়েছি। একজন জেলা প্রশাসক হিসেবে গত ছয় মাসে আমাকে সবচেয়ে বেশি অপারেশন করতে হয়েছে এখানে।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা মিটিংএ বসেন। বসে আপনাদের দায়িত্বটা জাস্ট একবার একটু পড়বেন । দেখবে যে তিতাস গ্যাসের চেয়ে আপনাদের দায়িত্বটা কোন অংশে কম নেই, এই জিনিসগুলো রক্ষা করা। যেহেতু আপনারা সরকারি কর্মচারী এবং সরকারি বেতন নেন। তাই আপনাদের দায়িত্ব সরকারি সম্পদ রক্ষা করা। পুরো নারায়ণগঞ্জে অবৈধ লাইন আছে, এটা আমাদের জন্য যেমন লজ্জার তেমনি আপনি জনপ্রতিনিধি হিসেবে আপনারও লজ্জার।
তিনি বলেন, ভালো লাগছে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে, অপনারা একটা লাইভ দেখতে পাচ্ছেন। এই মুহূর্তে একটা সিসি ক্যামেরা রানিং আছে। এবং এই সিসি ক্যামেরা দিয়ে শুধুমাত্র এই এলাকার গ্যাসের লাইনকে পাহারা দেয়া না। এই এলাকায় যত ঘটনা ঘটুক না কেন, এই ক্যামেরায় কিন্তু আসবে। একই সাথে পুরো নারায়ণগঞ্জে মাত্র ১৫ টা ক্যামেরা না, হয়তো আমরা অনেক বেশি জায়গা কাভারেজের আওতায় নিয়ে আসব। এটা বিভিন্নভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা বাহিনী থেকে শুরু করে ট্রাফিক ব্যবস্থা ও গ্যাসের লাইন দেয়াসহ প্রত্যেকটা কাজেই কিন্তু সাহায্য করবে।

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা মিটিংএ বসেন। বসে আপনাদের দায়িত্বটা জাস্ট একবার একটু পড়বেন । দেখবে যে তিতাস গ্যাসের চেয়ে আপনাদের দায়িত্বটা কোন অংশে কম নেই, এই জিনিসগুলো রক্ষা করা। যেহেতু আপনারা সরকারি কর্মচারী এবং সরকারি বেতন নেন। তাই আপনাদের দায়িত্ব সরকারি সম্পদ রক্ষা করা। পুরো নারায়ণগঞ্জে অবৈধ লাইন আছে, এটা আমাদের জন্য যেমন লজ্জার তেমনি আপনি জনপ্রতিনিধি হিসেবে আপনারও লজ্জার।

তিনি বলেন, চেয়ারম্যান সাহেবদের এত অভিযোগ আপনাদের মাঝে, কিন্তু আমি আমি সাড়ে ছয় মাস এখানে আছি, কই কেউ তো আমাকে বললেন না। যে আমার এলাকায় এ সমস্যাটা একটু দেখেন। জেলা প্রশাসকের কাজই হলো পুরো জেলায় যেকোনো সমস্যা আমরা সরকারকে সরাসরি জানাতে পারি। শুধু দোষারোপ করা আর এরকম একটা অনুষ্ঠানে এসে আমি অনুরোধ করবো কথা বলবেন, গা গরম সবারই হয়, সবাই উত্তেজিত হতে পারি কিন্তু আপনাকে বুঝতে হবে কখন থামতে হবে। সব সময় চিৎকার করে কথা বলে একজন উপদেষ্টা সামনে এটাতে নারায়ণগঞ্জের অবস্থানকে আপনি কোথায় নিয়ে গেলেন ? এই বিষয়টা আসলে খেয়াল রাখবেন।

ডিসি বলেন, অনেক ঝগড়া আপনাদের যেখানে করার কথা সেখানে না করে আমাদের সামনে এসে করেন। যেন আমরা ভালো দর্শক বসে দেখব। এই কাজটি দয়াকরে এখানে করবেন না।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান, তিতাসের এমডি হারুন অর রশীদ মোল্লা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমির খসরু, নাসিকের সিও শহিদুল ইসলাম, বিকেএমএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহ-সভাপতি মোর্শেদ সারোয়ার সোহেলসহ জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীবৃন্দ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।