মিরর ডেস্ক : জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ নিয়ে কয়েকটি দেশ ও কুটনীতিকদের তৎপরতা এবং বিভিন্ন মন্তব্য-বিবৃতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । তিনি বলেছেন, মানবাধিকার ইস্যুতে একটি গোষ্ঠি বাংলাদেশকে নিয়ে খেলার চেষ্টা করছে। দুয়েকটা দেশ প্রত্যেক নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে ফেলতে চায়।
মঙ্গলবার ইতালিতে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে দেশ থেকে টাকা চুরি করে বিদেশে পাচার করেছে। তাই আজকে বিদেশে বসে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে দেশের বিরুদ্ধে বদনাম করতে পারছে।
তিনি বলেন, আমরাও তো ক্ষমতাচ্যুত হয়ে বিদেশে থেকেছি। আমাদের এতো টাকা ছিল না, নুন আনতে পান্তা ফুরিয়েছে। এসময় তিনি বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের আশ্রয় দেয়া দেশগুলোই এখন বাংলাদেশ নিয়ে খেলায় মেতেছে। বিএনপির মানবাধিকার রক্ষায় অনেকে এখন উদগ্রীব।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে বিএনপি ঘরনার অনেকেই বিদেশে আছেন। কেউ কেউ অপরাধী। তারা দেশের বাইরে পলাতক হিসেবে আছে। তারাই দেশের নামে বিভিন্নজনের কাছে চিঠি লিখে বদনাম করে বেড়াচ্ছে। নিজেরা দেশের উন্নতি করতে না পারলেও, বিএনপি অপপ্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে, দেশের ক্ষতি করছে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে দাবি করে তিনি বলেন,বিএনপির চরিত্র অগ্নিসন্ত্রাস। নির্বাচন ঠেকানোর নামে তারা ৫০০ ভোটকেন্দ্র জ্বালিয়ে দিয়েছে। ২৯টি ট্রেনে আগুন দিয়েছে। বাস জ্বালিয়েছে, মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। তারা আবার মানবাধিকারের কথা বলে। অথচ আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে। আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব- এটা আমাদের ¯েøাগান। আমরা ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরি করেছি।
তিনি বলেন, বিএনপি তো নির্বাচনই করেনি। তারা আবার ভোটের অধিকারের কথা বলে। ২০১৮ এর নির্বাচনে তাদের প্রতি আসনে দুই-তিন জন করে দাঁড়িয়েছিল। যে যতো টাকা দিয়েছে তাকেই নমিনেশন দিয়েছে। এরপর নিজেদের মধ্যেই গোলমাল। এরপর তারা আবার নির্বাচন বর্জন করল। তাহলে কারচুপির প্রশ্নটা এলো কোথা থেকে?, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এসময় শ্রমিক অধিকার নিয়ে কথা বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, লেবার ল’ শ্রমিকদের কল্যাণের দিকে বিশেষ দৃষ্টি রেখেই করেছি। আইএলও কনভেনশনের চারটি প্রটোকলের মধ্যে চারটিই আমরা করে দিয়েছি। কিন্তু বিশ্বের অন্য বড় দেশ, যারা প্রশ্ন তুলছে তারা দুইটার বেশি করেনি।
তিনি বলেন, তাদের দেশে কোনো শ্রমিক স্ট্রাইক করলে সাথে সাথে চাকরি থেকে বের করে দেয়। আমরা কিন্তু মানবিক দিকটা দেখি। এই করোনার সময় গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন দিয়েছি। সেখানে আমাদের প্রচুর ভর্তুকি দিতে হয়েছে। ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দিয়েছি। গরিবদের নগদ টাকায় সাহায্য করেছি। আমাদের সাহায্য থেকে কেউ বাদ যায়নি।
মানবাধিকার নিয়ে আমাদের দেশে যারা কথা বলে, তারা কোনোদিন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেনি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবধিকার যদি সংরক্ষণ করে তাহলে তা আওয়ামী লীগই করে। আর যারা এসব নিয়ে কথা বলে তারা মানুষ হত্যা করে। আজকে যদি মানবাধিকারে বিশ্বাসই না করতাম তাহলে রোহিঙ্গারা আশ্রয় পেত না। শুরুর দিকে কয়েকমাস তো আমাদেরই দেখতে হয়েছে। এরপর সাহায্যকারী সংস্থাগুলো এসেছে।
এদিকে খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সদর দফতরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ইতালির মন্ত্রীদের উদ্ধৃতি দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ইতালি তার সেবা ও কৃষি খাতে বাংলাদেশ থেকে আরও কর্মী নিতে চায়। শেখ হাসিনার সঙ্গে সোমবার ইতালির কৃষিমন্ত্রী ফ্রান্সেসকো ললোব্রিগিদা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেডোসি এবং বিচারমন্ত্রী কার্লো নর্দিওর বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন মোমেন। ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম এবং ইতালিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. শামীম আহসান উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কর্মীদের বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ চ্যানেল বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয় বৈঠকে। আলোচনায় অবৈধ শ্রমিকদের বিষয়টিও উঠে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার দেশ সবসময়ই অবৈধ শ্রমিকদের নিরুৎসাহিত করে।
বৈধ ও অবৈধ উভয় শ্রমিকই ইতালি এবং এমনকি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা সুশিক্ষিত ও দক্ষ এমন অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ করে নিতে পারে ইতালি সরকার।
আব্দুল মোমেন বলেন, ইতালি খুবই খুশি যে বাংলাদেশ সবসময়ই বৈধ উপায়ে শ্রমিক অভিবাসনে সহায়তা করছে।এছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী অন্য সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে এফএও সদর দফতরে খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মহাপরিচালক কু ডংইউ আয়োজিত সংবর্ধনায় যোগ দেন।
জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সদর দপ্তরে তিন দিনব্যাপী ইউএন ফুড সিস্টেম সামিট বা খাদ্য ব্যবস্থাপনা শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষে রবিবার বিকালে ইতালি পৌঁছেন শেখ হাসিনা।পরে তিনি এফএও সদর দপ্তরে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।
ইউএন ফুড সিস্টেম সামিট বা খাদ্য ব্যবস্থাপনা শীর্ষ সম্মেলনে ২০টির বেশি রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানসহ ১৬০ টিরও বেশি দেশ থেকে প্রায় দুই হাজার প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন।##