* নারায়ণগঞ্জে জমতে শুরু করেছে কোরবানীর হাট
মিরর বাংলাদেশ :
নারায়ণগঞ্জের পশুর হাটে নদী পথে কোরবানীর পশু আসতে শুরু করেছে। ট্রলারে বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী সহ আশে পাশের হাট গুলোতে কোরবানীর পশু আনতে শুরু করেছে বেপারীরা। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসব পশু নারায়ণগঞ্জের হাট গুলো আনছে গরুর বেপারীরা। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের হাটগুলোতে পাবনা সিরাজগঞ্জ, রংপুর , জয়পুরহাটসহ বিভিন্ন জেলা থেকে নদী পথে কোরবানীর পশুর আসছে। ঈদুর আযহার এখনো ১ সপ্তাহ বাকী ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জের পশুর হাট গুলো জমতে শুরু করেছে।
রোববার দুপুরে বুড়িগঞ্জ নদীর তীরবর্তী ফতুল্লা ডিআইটি হাট,শীতলক্ষ্যা নদী তীরবর্তী চরসৈয়দপুর সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইলের ২নং ঢাকেশ্বরীর শীতলক্ষ্যা নদীর ঘাটসহ একাধিক হাটে ট্রলার থেকে কোরবানী পশু নামাতে দেখা গেছে।
জানা যায়,প্রতিবারের মতো এবারও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ১৮টি অস্থায়ী কোরবানী পশুর হাট বসছে। সিটি কর্পোরেশনের সিদ্ধিরগঞ্জ ও কদমরসুল অঞ্চলে এ হাটগুলো বসছে। এদের অধিকাংশ হাটই শীতলক্ষ্যা নদীর তীর ও আশাপাশের এলাকায়। এছাড়া বুড়িগঙ্গার তীরবতী, পাগলা মুন্সি খোলা, তালতলা, ফতুল্লার ডিআইটিসহ আশে পাশে^র হাট গুলোতে নদী পথে কোরবানীর পশু আসতে শুরু হয়েছে । দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গরুর পাইকাররা নদী পথে ট্রলার যোগে কোরবানীর হাটে ষাঁড় গরুসহ নানা জাতের পশু উঠাচ্ছেন। ফতুল্লার ডিআইটি মাঠের গরু পাইকার শফিকুল ইসলাম গতকাল রোববার বিকেলে বলেন, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থেকে ট্রলার যোগে ২৫টি কোরবানীর গরু নিয়ে নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, এবারে সবকিছুর দাম বেশী তাই খরচ বেশি হওয়ায় গরুর দাম একটি বেশি হবে।
একই হাটের গরুর বেপারী সাইফুল ইসলাম জানান, ট্রলারে করে ৩০টি গরু নিয়ে এসেছেন। আরো ২৬টা গরু নিয়ে আসবেন। শাহজাদপুর থেকে তিনি প্রতিবছরই গরু নিয়ে নারায়ণগঞ্জের হাট গুলোতে আসেন। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের এগরুর বেপারী জানান, পথে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। সামান্য লাভ হলেই গরু বিক্রি করে দিবেন বলে জানান।
সিদ্ধিরগঞ্জের ৮নং ওয়ার্ডে গোদনাইল ইব্রাহীম টেক্সটাইল মিলস এর খালি মাঠ উঠাচ্ছেন। গরুর পাইকার রাসেল মিয়া বলেন, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থেকে ৩০টি গরু নিয়ে ট্রলার যোগে তারা ৮নং ওয়ার্ডের অস্থায়ী গরুর হাটে উঠাচ্ছেন। একই জেলা থেকে পাইকার ময়নাল বেপারীর নেতৃত্বে ট্রলার যোগে ২৪টি গরু নিয়ে একই হাটে উঠাচ্ছেন। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের পাইকার আব্দুর রহমান বলেন, তিনি ২টি গরু নিয়ে কোরবানীর হাটে বিক্রির জন্য সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইলের হাটে এসেছেন।
তিনি বলেন, এবার গরুর দাম গতবারের চেয়ে একটু বেশি। গত বার যে গরু ১ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে এবার সেই গরু ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হবে। এভাবেই শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ও আশপাশের অস্থায়ী পশুর হাটে কোরবানী গরু আসতে শুরু করেছে। গরুর ক্রেতারাও হাটগুলোতে গরু দেখা শুরু করেছেন।
নারায়ণগঞ্জ সদরের চর সৈয়দপুর শীতলক্ষ্যা সেতু থেকে গরু নামাচ্ছে পাবনা থেকে আসা গরুর বেপারী মাইনুল। তিনি জানান, ঈদের এখনো ১ সপ্তাহ বাকী। এবার আগে ভাগেই গরু নিয়ে আসছি। কষ্ট করে গরু লালন পালন করেছে। সবাই চায় কিছু টাকা লাভ করতে।
জালকুড়ির বাসিন্দা মঞ্জু মিয়া বলেন, কোরবানী অস্থায়ী পশুর হাটে গরু দেখতে এসেছি। এখন গরুর দাম কেমন দেখে গেলাম। পরে এসে কিনে নিয়ে যাবো।
এদিকে জেলার ফতুল্লা, বন্দর, সোনারগাঁও, আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জের বিভিন্ন স্থায়ী ও অস্থায়ী পশুর হাটে কোরবানী পশু উঠতে শুরু করেছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের আনাগোনায় হাটগুলো মুখর হয়ে উঠছে। এখনো ঈদের কয়েকদিন বাকি থাকায় হাটে গরু আসা শেষ হয়নি। কোরবানির আগেরদিন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু আসা অব্যাহত থাকবে।
সরেজমিনে কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা যায়, হাটগুলোতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে গরু আসতে শুরু করেছে। খামারিরা নানা জাতের গরু এনে হাটে তুলেছেন। ক্রেতারাও আসতে শুরু করেছেন হাটে।
কোরবানি ঈদকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলায় স্থায়ী-অস্থায়ী সবমিলিয়ে প্রায় ৭৫টি হাট বসছে। আর এসব হাটে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু আসতে শুরু করছে।
ফতুল্লার ভুইগড় সোনালী সংসদ মাঠে বসা হাটে গরু নিয়ে এসেছেন খামারি হবি। তিনি বলেন, আমি পাবনা থেকে ১৬টি গরু নিয়ে আসছি। আমার এখানে সর্বনিম্ন দুই লাখ টাকা থেকে শুরু করে পাঁচ লাখ টাকা দামের গরু রয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবারও গরু নিয়ে এসেছি। আশা করছি, এবারও হয়তো ভালো দামেই গরু বিক্রি করতে পারবো।
এদিকে ঈদুল আজহা উদযাপনে নৌ পথে হয়রানি ঠেকাতে বিশেষ নজরদারি থাকবে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত আইজিপি ও নৌ পুলিশের প্রধান মো. আবদুল আলীম মাহমুদ। বৃহস্পতিবার নৌ পুলিশ সদর দফতরে যাত্রী, পণ্য ও কোরবানির পশু পরিবহনে নিরাপত্তা সংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
নৌ পুলিশ প্রধান বলেন, কোরবানির পশু পরিবহনে যাতে কোনো প্রকার বিঘ্ন না হয় সেজন্য কোরবানির পশু বহনকারী সব নৌযান কোন হাটে ভিড়বে তা উল্লেখপূর্বক ব্যানার লাগাতে হবে। কোরবানীর পশুসহ অন্যান্য পণ্যবাহী নৌযান যেন নৌপথে কোনো প্রকার হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে নৌ পুলিশের বিশেষ নজরদারি থাকবে।
নৌপথের যে কোনো সমস্যায় জরুরি যোগাযোগের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নৌ পথে যেকোনো সমস্যায় নৌ পুলিশের কন্ট্রোল রুমের নম্বর- ০১৩২০১৬৯৫৯৮ অথবা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে নৌ পুলিশকে অবগত করলে নৌ পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের নৌপথে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন রাখতে এবং পশু ও পণ্য পরিবহন নিরাপদ ও নির্ঝঞ্ঝাট করতে নৌ পুলিশ বদ্ধ পরিকর। ঈদে নৌ পুলিশ সব নৌ ঘাট, নৌ টার্মিনালগুলোতে দায়িত্ব পালন করবে।
তিনি বলেন, ঈদুল আজহা উদযাপনে নৌ পথ ব্যবহারকারী সবাই যেন নিরাপদে তাদের পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন এবং ব্যবসায়ীরা যাতে নির্বিঘ্নে পণ্য ও কোরবানির পশু নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যেতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে দেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাটে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করবে নৌ পুলিশ।