নারায়ণগঞ্জে ঝুকিপূর্ণ ভবন ভাঙ্গছে না রাজউক !

249

* একের পর এক ঘটছে দূর্ঘটনা
*  বিস্ফোরণের সেই দোতলা ভবনটি ভেঙ্গে ফেলতে প্রশাসনের আলটিমেটাম
*  দূর্ঘটনার পর থেকে গ্যাস সংযোগ বিছিন্ন নিতাইগঞ্জে

মুহা : ইউসুফ আল আজিজ :
নারায়ণগঞ্জ শহরে সিটি করপোরেশনের তালিকাভুক্ত ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে ৪২টি। ২০১৮ সালের সার্ভে অনুযায়ী এই ভবনের তালিকা তৈরি করা হয়। যেকোন দুর্যোগ কিংবা স্থাপনা দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে ধসে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে এই ভবনগুলো। এরই মধ্যে নিতাইগঞ্জের ঝুকিপূর্ণ একটি ভবন আংশিক ধসে পড়েছে শনিবার সকালে। ভবনটিতে অগ্নিকান্ড, বিস্ফোরণ ও ধসের কারণে একজন নিহত ও ১০জন আহত হয়েছেন।
ঝুকিপূর্ণ ভবনে একেরপর এক দূর্ঘটনা ঘটে তবে কেউ তাতে কর্নপাত করেনা। ঝুকিপূর্ণ ভবন ভেঙ্গে ফেলার বিষয়ে অনেকটা অনীহা রাজউকের। সর্বশেষ শনিবার যে ভবনে বিস্ফোরনের ঘটনা ঘটেছে সেটি ১০ বছরে আগেই পরিত্যাক্ত ঘোষণা করলেও তাতে দিব্যি চলছিল ব্যবসা বানিজ্য।
সিটি করপোরেশনের তালিকাভুক্ত ৪২টি ভবনের মধ্যে ১৫তম শনিবার বিষ্ফোরনের শিকার ইলিয়াস দেওয়ানের এই ভবনটি। মালিক ইলিয়াস দেওয়ান নারায়ণগঞ্জ জেলা আটা ময়দা মিল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি। ভবনটি প্রায় শত বছরের পুরোনো। ভবনটি ভেঙ্গে ফেলা অথবা সংস্কার করার জন্য বেশ কয়েকবার চিঠি প্রদান ও নোটিশ পাঠানো হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি মালিকপক্ষ। অন্যদিকে এসব ভবনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য রাজউককে বলা হলেও রাজউক কিছুই করেনি বলে দাবি করেছে নাসিক।
অভিযোগ রয়েছে, ‘রাজউকের বেশ কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা নকশা অনুমোদনের নামে ঘুষ নিয়ে থাকেন। সেই টাকা না দিলে অভিযান চালিয়ে ভেঙ্গে দেয়া হয় বর্ধিত অংশ। অথচ শহরের মাঝে বিদ্যমান ঝুকিপূর্ণ ভবনগুলো নির্বিঘেœ দাঁড়িয়ে আছে। এদের বিরুদ্ধে রাজউকের দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না।
সম্প্রতি বেশ কয়েকটি নকশা বহির্ভূত নির্মিত ভবনে অভিযান চালায় রাজউক নারায়ণগঞ্জ। বেশ কয়েকটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হবার পর এদের মালিকরা একত্রিত হয়ে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি এমপি সেলিম ওসমানের কাছে যান। সেখানে রাজউকের দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তোলেন। তাঁরা বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ রাজউকের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা তাদের কাছ থেকে নকশা অনুমোদনের নামে মোটা অংকের ঘুষ নেন। এরপর নতুন অফিসার এসে আবারও ঘুষ দাবি করেন। দাবিকৃত টাকা না দিলে তাদের ভবনের বর্ধিত অংশ ভেঙ্গে দেয়া হয়।’
ওই অভিযোগের পরে এমপি সেলিম ওসমান রাজউকের বর্তমান চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান মিয়াকে ফোন করে বিষয়টি জানান। তাকে নারায়ণগঞ্জ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়টি তুলে ধরলে রাজউক চেয়ারম্যান ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগ তার দপ্তরে জমা দিতে বলেন।
রাজউকের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা প্রস্তুত করলেও এসব বিষয় দেখভাল ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ার রাজউক নিয়ে নিয়েছে। তাদেরকে এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা প্রদান এবং অবগত করা হলেও তাঁরা কোন ব্যবস্থা নেয়নি। অথচ বিভিন্ন সময় নব নির্মিত ভবন নিয়মমাফিকভাবে গড়ে উঠেনি বলে তাঁরা অভিযান চালিয়ে বর্ধিত অংশ অভিযান চালিয়ে ভেঙ্গে দেয়। রাজউক শুধু ভেঙেই দেয় না, ৫ লাখ-১০ লাখ টাকা জরিমানাও করে। এমনকি বিভিন্ন বিল্ডিংয়ের মিটারগুলিও তাঁরা নিয়ে যাচ্ছে এবং সেই মিটারের বিনিময়ে টাকা দাবি করে তারপরে ছাড়ছে। কিন্তু পুরাতন বিল্ডিংয়ের ব্যাপারে তাদের কোন মাথাব্যথা নাই। দীর্ঘদিন ধরে চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হলেও রাজউক অজানা কারণে নীরব রয়েছে।’
তবে রাজউকের অথোরাইজড অফিসার শুভঙ্কর সুষ্ময় রায় বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। আপনারা চাইলে আমি এই বিষয়ে আইনটাও তুলে ধরতে পারি। যেহেতু একটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ধসে পড়ার ঘটনা ঘটেছে, এই বিষয়টি আমরা খোঁজ খবর নিবো।’
এদিকে নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জে বিস্ফোরণের সেই দোতলা ভবনটি মালিক পক্ষ না ভাঙলে বিভিন্ন সংস্থা ভেঙে দিবে।

মঙ্গলবার দুপুরে নিতাইগঞ্জে জেলা প্রশাসন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, গণপূর্ত, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), তিতাস গ্যাস, ডিপিডিসি ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
শনিবার সকালে নিতাইগঞ্জে ইলিয়াছ দেওয়ানের মালিকানাধীন শত বছরের পুরোনো দোতলা ভবনে গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে সেদিন একজন ও পরে আরো একজন শ্রমিকের মৃত্যু এবং ৯ জন আহত হয়। এর পর থেকে ওই ভবন সীলগালা করে দেয় ফায়ার সার্ভিস।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘ভবনটি অপসারণের জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে ভবনমালিককে নোটিশ দেওয়া হবে। এই সময়ের মধ্যে অপসারণ করা না হলে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে ভবনটি ভেঙে ফেলা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রকৌশলীরা ছিলেন ভবনটি পরিদর্শন করে বলেছে, ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।
নিতাইগঞ্জে গ্যাস সংযোগ বন্ধ
শহরের নিতাইগঞ্জের আর.কে.দাস রোডে (ডাইলপট্টি) একটি বাণিজ্যিক ভবনে বিস্ফোরণের পর শনিবার বিকেলে আশেপাশের সকল এলাকায় গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে তিতাস। ে স্থানীয়দের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, শনিবার বিকেল থেকে নিতাইগঞ্জের আর.কে.দাস রোড, বি.কে.দাস রোড এবং আর.কে মিত্র রোডসহ অন্যান্য এলাকার বাড়িঘর ও কল-কারখানায় গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে তিতাস। তাই গ্যাস না পেয়ে, চমর ভোগান্তি পোহাচ্ছেন স্থানীয় লোকজন। তবে তিতাতের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফায়ার সার্ভিসের অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা পুরো এলাকায় গ্যাস সংযোগ সচল করতে পারবে না। অন্যদিকে, মন্ডলপাড়া ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক ফখরুদ্দিন আহম্মেদ বিষয়টিকে তিতাসের ব্যর্থতা বলে উল্লেখ করেছেন।
আর.কে.দাস রোডে অবস্থিত একটি বহুতল ভবনের মালিক নেসার আহম্মেদ অভিযোগ করে বলেন, যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখানের লাইনটি বন্ধ করে দিয়ে বাকিগুলো সচল করে দিলেই পারতো তিতাস। কিন্তু তাঁরা পুরো এলাকার লাইন বন্ধ করে দিয়েছে। এটা একমাত্র বাংলাদেশেই সম্ভব। আমরা মনে হয় না খুব দ্রæতই আমরা গ্যাস সংযোগ ফিরে পাবো! আমার পুরো বাড়ির ভাড়াটিয়ারা গ্যাসের জন্য রান্না করতে পারছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিতাসের চাষাঢ়া কার্যালয়ের ডি.এম.ডি আনিসুর রহমান জানান, আমরা আসলে এখনই গ্যাস সংযোগ ফিরিয়ে দিতে পারবো না। যদি ফায়ার সার্ভিসের লোকজন উক্ত এলাকাটিকে ঝুঁকিমুক্ত বলে আমাদের জানান, তাহলেই গ্যাস সংযোগ দ্রুততার সাথে ফিরিয়ে দেওয়া যাবে। ##