নাসিক নির্বাচনঃ আগাম প্রচারণায় নেমেছে সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা

301

রিপন মাহমুদ আকাশ: সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ডিসেম্বরে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (এনসিসি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সম্ভাবনা আঁকড়ে ধরে নাসিকের নির্বাচনের আগাম প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন সম্ভাব্য কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা। যা প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে দেখা যাচ্ছে। তবে নির্বাচনী প্রচারণায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর এগিয়ে থাকলেও দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

তবে হেফাজতে ইসলামের মামলা জটিলতার কারণে এখনও এলাকা ছাড়া রয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায় নাসিকের ১০টি ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি এলাকার বাজারে-ঘাটে, আনাচে-কানাচে, গাছে, মসজিদ-মন্দিরসহ সমাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আশপাশের শুভেচ্ছা, ধন্যবাদ ও অভিনন্দনের ব্যানারে ছেয়ে গেছে। এসকল ব্যানার বেশির ভাগই হচ্ছে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে থাকা সম্ভাব্য কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের।

এদিকে বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। তারা সবাই দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে যে, তাদের দল আদৌও নির্বাচনে যাবে কি-না? তবে বিরোধী দলীয় অনেক সম্ভাব্য প্রার্থী ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে প্রচারণার মাঠে আছে নিরবে।

এদিকে বর্তমানে ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রচারণায় ব্যস্ত সম্ভাব্য প্রার্থীরা। যার মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় ফেসবুকের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। যারা বর্তমানে নাসিকের ওয়ার্ড কাউন্সিলর রয়েছেন, তারা তাদের মাধ্যমে হওয়া সকল ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ছবি ও তথ্য পৌঁছে দিচ্ছেন সাধারণ ভোটারদের কাছে।

আর যারা সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন তারাও ফেসবুকে বর্তমান কাউন্সিলরদের নানা দোষত্রুটি তুলে ধরছেন। কথা হয় নাসিক ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোঃ রায়হান হোসেন রাব্বির সাথে। তিনি জানান, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের এটা তৃতীয় মেয়াদের নির্বাচন। এতদিনে আমরা সাধারণ ভোটাররা কি পেলাম আর কি না পেলাম সে দরকষাকষি হবে এবারের নির্বাচনে। আমরা আমাদের পছন্দের মানুষকেই ভোট দিবো। যাতে ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষ আরো সুযোগ সুবিধা পায়।

সিটির ৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রাকিবুল হাসান নামে এক চাকুরিজীবী বলেন, আমি রাজনীতি তেমন বুঝি না। কাজ করি বেতন দিয়ে সংসার চালাই। তবে নিজেদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে আমরা সবাই সচেতন।

২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আরাফাত সুমন বলেন, আমাদের বর্তমান কাউন্সিলর মোঃ ইকবাল হোসেন কারাগারে বহুদিন ধরে। সে বিরোধী দলের রাজনীতি করেন। হেফাজতের নাশকতার মামলায় তিনি জেলখানায়। জামিন পাচ্ছেন না বহুদিন ধরে। আমরা কাউন্সিলর থেকে সেবা পাচ্ছি না। কারণ তিনি কিভাবে সেবা দিবেন তিনি নিজেই তো বন্দী।

নাসিক ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ওমর ফারুক বলেন, গত নির্বাচনে আমার ওয়ার্ডবাসী আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিলেন। তাই আমি তাদের সেবায় কাজ করতে পেরেছি। আমার ওয়ার্ডের প্রতিটি জনগণের প্রতি আমার আস্থা রয়েছে তারা উন্নয়নের জন্য ও শান্তির জন্য এবারও আমাকে ভোট দিয়ে তাদের সেবা করার সুযোগ দিবেন।

এদিকে নাসিক প্যানেল মেয়র ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি বলেন, আমার ওয়ার্ডবাসী দেখেছেন আমি নির্বাচিত হয়ে তাদের জন্য কি কি উন্নয়নমূলক কাজ করেছি।

৬নং ওয়ার্ডের যে রাস্তা, ড্রেন ও ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারসহ যেসকল সমস্যার বিষয়গুলো গত মেয়াদে সমাধান হয় নি তা আমি নির্বাচিত হয়ে সমাধান করেছি। আমি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে সবসময় মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে কাজ করে যেতে চাই। আমার দৃঢ়বিশ্বাস আমি সাধারণ মানুষের ভোটে আবারও নির্বাচিত হয়ে আমার ওয়ার্ডে উন্নয়নের দ্বারা অব্যাহত রাখতে পারব।

আগামী নাসিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রচার প্রচারণার বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মুজিবুর রহমান জানান, করোনা মহামারীর জন্য প্রায় দুই বছর মাঠ পর্যায়ে তেমন কোনো কর্মসূচী পালন করতে পারেন নাই। তাই তারা নাসিকের প্রতিটি ওয়ার্ডে বর্তমানে কর্মী সমাবেশ করছেন। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে সফলভাবে তারা কর্মী সমাবেশ করেছেন আরো কিছু ওয়ার্ড বাকী আছে। নাসিক নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, দল যার হাতে নৌকা তুলে দিবেন নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ তার হয়ে নির্বাচনী মাঠে থাকবে।