মিরর বাংলাদেশ : ঈদুল আজহার ১০ দিনের ছুটি শেষে রাজধানীতে ফিরছে মানুষ। ট্রেন, বাস লঞ্চ টার্মিনালে দেখা গেছে ঢাকায় ফেরা যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে গ্রামে গিয়েছিলেন লাখো মানুষ। সেই আনন্দ উদযাপন শেষে এখন কর্মস্থল ঢাকায় ফিরছেন তারা। ঈদের ছুটি শেষ হযেছে শনিবার । আজ রোববার থেকে শুরু সরকারি অফিস।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদের ছুটি শেষে গ্রাম থেকে শহরে ফিরছেন লাখো মানুষ। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনগুলোয় কিছু শিডিউল বিপর্যয় ঘটলেও বেশিরভাগ ট্রেন কমলাপুরে নির্ধারিত সময়ে পৌঁছাচ্ছে। কমলাপুর রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। বিভিন্ন গন্তব্য থেকে আসা ট্রেনগুলোয় তিল পরিমাণ ফাঁকা ছিল না। প্রতিটি ট্রেনে যাত্রীরা দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করছেন। ট্রেনগুলো যথা নিয়মেই যাতায়াত করছে। স্টেশনে যাত্রীদের টিকিট দেখে দেখে ছাড়া হচ্ছে। কোনো যাত্রী টিকিট ছাড়া হলে তাকে জরিমানা করা হচ্ছে। ফিরতি যাত্রীরা বলছেন, ছুটি শেষ ও ভিড় হওয়ার আগেই ঢাকায় ফিরছেন তারা।
এদিকে শনিবার ঈদের ছুটি শেষ হলেও ঢাকায় ফেরা চলবে এই সপ্তাহব্যাপী। কারণ বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ এখনও বন্ধ রয়েছে। অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ। এসব কারণে ঈদে গ্রামে ফেরা অনেকেই একটু লম্বা ছুটি কাটিয়ে নগরীতে ফিরছেন।
কুমিল্লার লাকসাম থেকে ঢাকায় ফেরা মো. আশিকুর রহমান বলেন, ছুটি শেষ, রোববার থেকে আবার রুটিন অনুযায়ী চলতে হবে। ঈদের এ কয়টা দিন ভালোই কেটেছে। আসতে সময় লেগেছে। ট্রেনের ভেতরে কোনো ফাঁকা নেই, অনেক গরম।
চট্টলা এক্সপ্রেসের যাত্রী মো. ফারুক আলমগীর বলেন, অনেক ভিড় ট্রেনে, তিল পরিমাণ ফাঁকা ছিল না। দুই ঘণ্টা দেরিতে ট্রেন ছাড়ে। পরিবার নিয়ে আসতে কষ্ট হয়েছে। এক দিকে পরিবার ছেড়ে যাচ্ছি সেই কষ্ট, অপরদিকে ট্রেন দেরিতে ছাড়ায় ভোগান্তি। ঈদে যাওয়ার সময় এত কষ্ট হয়নি।
কসবা থেকে উপকূল এক্সপ্রেসের যাত্রী মো. জুনায়েদ ইসলাম বলেন, ছুটি শেষ তাই ফিরছি। বেশি ছুটি চেয়েছিলাম, কিন্তু মালিক দেয়নি। তাই চলে আসছি। ১০ দিন ছুটি কাটিয়ে এসেছি। দুয়েকদিন পরে এলে ভালো হতো। ট্রেনে অনেক ভিড়। অনেক গরম, তারপর দেড় ঘণ্টা দেরি হয়েছে। কারণ পথে ট্রেনে সমস্যা হয়েছে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত ঈদে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সবচেয়ে বেশি ঘরমুখো মানুষ ট্রেনে ঈদযাত্রা করেন। এ কারণেই বাড়তি নজর রয়েছে কমলাপুরে। ঈদযাত্রায় আন্তঃনগর, মেইল, কমিউটার মিলে প্রতিদিন ৭০ হাজারের বেশি যাত্রী পরিবহন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ঈদযাত্রায় সব ট্রেন সঠিক সময়ে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। ঈদযাত্রায় প্রতিদিন ৭০টি ট্রেন চলাচল করছে। এরমধ্যে ৪৪টি আন্তঃনগর, বাকিগুলো মেইল কমিউটার। এ কয়দিন কমলাপুর স্টেশনে টিকিট ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। গত ৯ জুন থেকে ফিরতি যাত্রা শুরু হয়েছে।
কমলাপুর রেলস্টেশনের কর্মকর্তা (স্টেশন ম্যানেজার) মো. সাজেদুল ইসলাম বলেন, শনিবার সরকারি ছুটির শেষ দিন, রোববার থেকে সব অফিস খুলে যাবে। তাই শনিবার ট্রেনে চাপ বেশি। কিছু ট্রেন নানা কারণে দেরিতে এসেছে। যাত্রীদের এত চাপ যে সকাল থেকেই একটার পর একটা ট্রেন আসছে। ১০ থেকে ১৫ মিনিট অন্তর ট্রেন আসছে ও যাচ্ছে। এদিকে আমাদের গত সোমবার থেকে ফিরতি যাত্রা শুরু হয়েছে। কিন্তু শুক্রবার ও শনিবার ভিড় সবচেয়ে বেশি।
এদিকে ঈদের ছুটি শেষে রাজধানী ঢাকায় ফিরতে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। যানজটের কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়ক দিয়ে ফিরতি পদে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। তবে গণপরিবহন সংকট থাকায় যানজটের মধ্যেই বাসের ছাদ, খোলা ট্রাক ও পিকআপভ্যানে ঝুঁকি নিয়ে ফিরছেন অনেকে। যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শনিবার বিকেল পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
খোলা ট্রাকের যাত্রী আব্দুর রহিম বলেন, ‘গণপরিবহন না পেয়ে ট্রাকে করেই ঢাকায় যাচ্ছি। তবে সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকায় যেকে জনপ্রতি ৩০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।’
ট্রাকচালক মাহবুব বলেন, ‘সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল থেকে রাত ১০টার সময় ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছি। কিন্তু দুপুর ১টা পর্যন্ত টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় এসেছি। মহাসড়কের সিরাজগঞ্জ অংশে প্রচুর যানজট।’
বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন ইউসুফ নামের এক যাত্রী।
তিনি বলেন, ‘প্রায় এক ঘণ্টা ধরে মহাসড়কে দাঁড়িয়ে রয়েছি, কোনো যানবাহন পাচ্ছি না। আমার মতো অনেকই গণপরিবহনের জন্য দীর্ঘক্ষণ ধরে মহাসগড়কে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। বিশেষ করে লোকাল যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে।’
মরিয়ম খাতুন বলেন, ‘গাড়ির সিট খালি না থাকায় কর্মস্থল গাজীপুরে যেতে পারছি না। ভাড়াও চাওয়া হচ্ছে দ্বিগুণের বেশি।’
নারগিস আক্তার নামের আরেকজন বলেন, ‘আমি সাভারের জামগড়া যাবো। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও বাস পাচ্ছি না। আবার ভাড়া চাওয়া হচ্ছে বেশি। টাঙ্গাইল থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ভাড়া চাওয়া হচ্ছে ২০০ টাকা। কিন্তু টাঙ্গাইল থেকে গাজীপুর থেকে আমার ভাড়া লাগে মাত্র ৮০ টাকা।’
সরেজমিনে দেখা যায়, গণপরিবহনের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা মহাসড়কে দাঁড়িয়ে রয়েছেন যাত্রীরা। অনেকেই বিকল্প ব্যবস্থায় ঝুঁকি নিয়েই বাসের ছাদ, খোলা ট্রাক ও পিকআপভ্যানে করে ঢাকায় যাচ্ছেন। পুরুষের পাশাপাশি নারী ও শিশুদেরও ঝুঁকি নিয়ে যেতে দেখা গেছে। মহাসড়কে পুলিশের পাশাপাশি সেনবাহিনী সদস্যদের যানজট নিরসনে কাজ করতে দেখা যায়।
এদিকে ঈদুল আজহার লম্বা ছুটির পর চট্রগ্রাম বিভাগের জেলাগুলো থেকে মানুষ ছুটছেন ঢাকায়। ঢাকা থেকে আবার দূর পাল্লার গন্তব্যে যাবেন অনেকেই। ছুটির শেষ মুহূর্তে এসে সব টার্মিনালে দেখা দিয়েছে যাত্রীবাহী বাসের সংকট। কাঙ্খিত যানবাহন না পাওয়ায় ঘন্টার পর ঘন্টা বাসস্ট্যান্ডে কিংবা মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ভোগান্তিতে যাত্রীরা । শুধু কুমিল্লা শহর নয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জাঙ্গালিয়া ও শাসনগাছা বাস টার্মিনাল, পদুয়ার, বাজার বিশ্বরোড, আলেখারচর বিশ্বরোড ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় দেখা গেছে এমন চিত্র । কেউ কেউ তিন থেকে চার ঘন্টা আগে বাসের টিকেট করে ও বাস পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। কাউন্টার কর্তৃপক্ষ বলছে, ঈদের ছুটি শেষ দিন হওয়ায় ঢাকাগামী যাত্রী বেশি। একই সাথে অনেকেই কুমিল্লা ছাড়তে যাওয়ায় এই ধরনের চাপ পড়েছে। এছাড়া মহাসড়কের কোথাও কোথাও যানজট এবং জটলা থাকায় যাত্রীবাহী বাসের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। শনিবার বিকেলে এই সঙ্কট আরো প্রকট হয়ে উঠে।
শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কুমিল্লার শাসনগাছা , জাঙ্গালিয়া ও ক্যান্টনমেন্ট বাস কাউন্টার এলাকা ঘুরে দেখা যায় , ঈদুল আযহার দীর্ঘ ৯ দিনের ছুটির পর বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ ছুটছেন ঢাকার উদ্দেশ্যে । যাত্রীদের চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত বাস না থাকায় চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা ।
ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেও বাস পাচ্ছেন না যাত্রীরা । নোয়াখালী , চট্টগ্রাম , চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর থেকে যে সকল বাস ছেড়ে আসছে সেগুলোও পরিপূর্ণ ।
কুমিল্লা থেকে গার্মেন্টস কর্মী আব্দুল হাকিম ঢাকায় যাবেন । অপেক্ষা করছেন আলেখারচর বিশ্বরোড এলাকায় তিনি জানান, ১ ঘন্টা যাবৎ বাসের জন্য অপেক্ষা করছি । কিন্তু বাস পাচ্ছি না । আগামীকাল অফিস খোলা ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলাম । এখন ঢাকায় ফেরার পথে চরম ভোগান্তি । এর মধ্যে আবার তীব্র গরমে অসহ্য লাগছে ।
*****