বিধিনিষেধ কাটিয়ে পুরনো ‘চেনা রূপে’ ফিরেছে ঢাকা

323

মিরর বাংলাদেশ : করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে সরকারের দেওয়া ২১ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ কাটিয়ে পুরনো ‘চেনা রূপে’ ফিরেছে ঢাকা। যাদুর শহর ঢাকায় শুরু হয়েছে বাস-সিএনজির চলাচল। কোনো বাসে আসনের অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণ করতে দেখা গেছে। আসন না পেয়ে অনেকেই দাঁড়িয়ে গন্তব্য যাচ্ছেন। আবার কোনো বাসে যাত্রী নেই। তারা যাত্রী সংকটের কথা বলছেন। তবে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ নেই যাত্রীদের। আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন চালক ও যাত্রীরা।
বিধিনিষেধ শেষ হওয়ার পর পুরো যাত্রী নিয়ে অর্ধেক বাস চলাচলের যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা আজ বৃহস্পতিবার থেকে প্রত্যাহার হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ।
অর্ধেক বাস চলাচলের সিদ্ধান্ত আগামীকাল থেকে আর থাকছে না জানিয়ে এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার থেকে সব বাস চলবে। সেতু মন্ত্রণালয় থেকে কেবিনেটে এমন একটা প্রস্তাব গেছে বলে জেনেছি।’
এমন সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত না এলে সেক্ষেত্রে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের কোনো সমস্যা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না। সমস্যা হবে না। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা চালাবো।’
অর্ধেক পরিবহন চলার কারণে অনেক পরিবহন শ্রমিক কাজ পাচ্ছেন না। ফলে সড়কে গণপরিবহন চলাচল শুরু হলেও বসে থাকতে হচ্ছে অনেক শ্রমিকদের। তাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে এই পরিবহন নেতা বলেন, ‘চেষ্টা করছি। দেখি কিছু করা যায় কি না।’
এর আগে গত সোমবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন, অর্ধেক বাস চলাচলের সিদ্ধান্তের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা হয়নি। মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিষয়টি আমাদের মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বি আরটিএ) সঙ্গে আলোচনা করে নিলে ভালো হতো। কারণ, অর্ধেক গাড়ি চলবে, অর্ধেক চলবে না, এটা নিশ্চয়তা কে দেবে? এটা ঠিকমতো হবে কি না। আগে আলাপ করলে আমরা আমাদের মতামত দিতাম। বিষয়টি এখন জেলা প্রশাসন ও পুলিশের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। তারা যদি সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারে, ভালো কথা। এটা আমাদের এখতিয়ার নয়।’
সেদিনই অর্ধেক বাস চলাচলের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। বলেছেন, অন্তত কিছুদিন জেলাপর্যায়ে ডিসি, এসপি, পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে বসে যত বাস আছে, তার অর্ধেক চালাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়, যাতে বাইরে থেকে চাপ কম হয়। একসঙ্গে বেশি গাড়ি ঢাকা বা চট্টগ্রামে ঢুকতে না পারে।
এ সিদ্ধান্ত কেবল আন্তঃজেলার জন্য কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, এটি স্থানীয় প্রশাসনের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক স্থানীয় প্রশাসন এটা ঠিক করবে। ডিসি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং মালিক ও শ্রমিকেরা বসে পদ্ধতি বের করবেন।
টানা ২১ দিন বন্ধ থাকার পর বুধবার থেকে শুরু হয়েছে গণপরিবহন চলাচল। করোনা সংক্রমণ রোধে গত ১ জুলাই থেকে বিধিনিষেধ শুরু হয়। তবে ঈদ উপলক্ষে ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই ভোর ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আবারও বিধিনিষেধ কার্যকর করা হয়। পরে তা আরেক দফা বাড়িয়ে ১০ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়।
গত রবিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সব আসনে যাত্রী নিয়ে চলবে ট্রেন-লঞ্চ-বাস। তবে সড়কে অর্ধেক বাস চলবে। প্রতিদিন মোট যানবাহনের অর্ধেক গাড়ি রাস্তায় নামানোর শর্ত দেওয়া হয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ সড়ক পরিবহনমন্ত্রী। এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নেই জানিয়ে তা প্রত্যাহারের দাবি করেছে পরিবহন মালিক সমিতি। বুধবার বিধিনিষেধের পরদিন রাজধানীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
মহাখালী এলাকায় দেখা গেছে, বলাকা পরিবহনে যাত্রীদের দাঁড় করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এই পরিবহনের একটি বাসের চালক বলেন, যাত্রী আছে। সামনেই নেমে যাবে। তাই কিছু যাত্রী দাঁড়িয়ে আছেন। সিটের অতিরিক্ত যাত্রী আমরা নিচ্ছি না। ভাড়া আগের মতোই।
এই বাসে থাকা যাত্রী শাহীন বলেন, পূর্বের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। তবে তারা অতিরিক্ত যাত্রীও পরিবহন করছে।
গাবতলী রোডের বাস রইছ পরিবহনের সহকারী মামুন বলেন, যাত্রী আছে। তবে চাপ কম। ভাড়া আগের মতো ২০ টাকা করে নিচ্ছি। মহাখালী থেকে গাবতলীর ভাড়া ২০ টাকা ছিল আগে। এখনো তাই নিচ্ছি।
এই বাসের একজন যাত্রী সুজন বলেন, অনেক দিন পর বাসে করে অফিসে যাচ্ছি। ভাড়া বেশি নিচ্ছে না। তবে বাসে যাত্রী ভালোই আছে।
মিরপুর রোডের আলিফ পরিবহনে দেখা গেছে, যাত্রী একেবারেই নেই। এই পরিবহনের একটি বাসের চালক আবু তাহের সারাবাংলাকে বলেন, যাত্রী নেই। সকাল থেকেই এমন অবস্থা। খুব কম যাত্রী। ভাড়া আগের মতো ২০ টাকা করে নিচ্ছি। বাড়তি ভাড়া নেই।
এদিকে ফার্মগেটে দেখা গেছে কোনো কোনো বাসে অতিরিক্ত যাত্রী আছে। আবার কোনোটির আসন ফাঁকা। শিকড় পরিবহনে দেখা গেছে অতিরিক্ত যাত্রী নেই। ভাড়াও আগের মতো। বিহঙ্গ পরিবহনে দেখা গেছে আসনের অতিরিক্ত যাত্রী। শাহবাগেও একই রকম চিত্র দেখা গেছে। শোব মিলিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার চিত্রও অভিন্ন।