২২তম রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু

285

* সবই সর্বশক্তিমান আল্লাহর ইচ্ছা : চুপ্পু

মিরর বাংলাদেশ : দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক কমিশনার মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুই হচ্ছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি। তিনি রাষ্ট্রপতি পদে একমাত্র প্রার্থী হওয়ায় এখন আর ভোটের প্রয়োজন হচ্ছে না। দেশের ২২ তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে আগামী আজ বা কালকের মধ্যে বিজয়ী ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন।
রোববার নির্বাচন কমিশনে মনোনয়ন জমা সকালে আগারগাঁওস্থ নির্বাচন কমিশনে মনোনয়পত্র জমা দিয়েছেন তিনি। এসময় সাংবাদিকরা তার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চান। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছা। সবই সর্বশক্তিমান আল্লাহর ইচ্ছা।’ গণমাধ্যমকে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় তিনি আরও বলেন, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কারণ, তিনি আমাকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছেন।’
গতকাল রোববার সকালে প্রেসিডেন্ট পদে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর নাম প্রস্তাব করে মনোনয়ন জমা দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার গতকালই শেষ দিন। প্রেসিডেন্ট পদে আর কোন দল মনোনয়নপত্র জমা না দেয়ায় আজ বা কাল দেশের ২২তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।
ফেব্রæয়ারির ১৯ তারিখ ভোটের দিন রেখে গত ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের দ্বাবিংশতম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগ্রহী প্রার্থীরা ১২ ফেব্রæয়ারি সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। ১৩ ফেব্রæয়ারি যাচাই বাছাইয়ের পর ১৪ ফেব্রæয়ারি বিকাল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে।
নির্বাচন কমিশনের সচিব জাহাংগীর আলম জানান, মনোনয়নপত্র দাখিলের নির্ধারিত সময় রোববার বিকেল চারটা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়া আর কারও মনোনয়নপত্র জমা পড়েনি। সোমবার দুপুরের মধ্যে প্রার্থিতা বাছাইয়ের পর নির্বাচন কমিশন তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে।
নির্বাচন কমিশনে যাওয়ার আগে সকালে ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। সে সময় শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি পদে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে প্রার্থী মনোনীত করার সিদ্ধান্ত দেন বলে দলটির সূত্রে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের সংসদীয় দল গত মঙ্গলবার বৈঠক করে দলের নেত্রী শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় প্রার্থী বাছাই করার দায়িত্ব দিয়েছিল। আজ সকালে দলীয় সভাপতির কাছে সিদ্ধান্ত পাওয়ার পরই ওবায়দুল কাদের নির্বাচন কমিশনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র পেশ করেন।
দলীয় প্রার্থীর মনোনয়নপত্র পেশ করার পর নির্বাচন কমিশনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের কাছে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে মনোনয়ন প্রদান করেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মাননীয় সভাপতি এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি পার্টির প্রধান বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় শেখ হাসিনা এই মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছেন।’
সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দল রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী দেয়নি। সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপির সাতজন সদস্য সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছেন গত ১১ ডিসেম্বর। ফলে এখন সংসদে বিএনপির কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সম্পর্কিত বিধানে বলা হয়েছে, প্রার্থী একজন হলে এবং যাচাইয়ে তাঁর মনোনয়নপত্র বৈধ বিবেচিত হলে নির্বাচন কমিশন তাঁকে নির্বাচিত ঘোষণা করবে। সংসদে আর ভোটের প্রয়োজন হবে না। আগামীকাল প্রার্থিতা বাছাইয়ের দিনেই একমাত্র প্রার্থী দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব গ্রহণের তারিখ থেকে ৫ বছরের জন্য পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৮ সালের ২৪শে এপ্রিল দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
সেই অনুযায়ী তার ৫ বছরের মেয়াদ আগামী ২৩শে এপ্রিল শেষ হবে।
১৯৪৯ সালে পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। তিনি ছাত্র জীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে সংঘটিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাÐের পর কারা বরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণকারী সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডার হিসেবে যোগ দেন। বিচারকের বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে ২৫ বছর পর ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন।
২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামÐলীর সদস্য হন তিনি। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে এক পুত্র সন্তানের পিতা এবং তার স্ত্রী প্রফেসর ড. রেবেকা সুলতানা সরকারের সাবেক যুগ্ম সচিব ছিলেন।