রায়পুরের ওসির মহানুভবতা

498

মিরর বাংলাদেশ  :

আর্থিক  সহায়তা নিয়ে অসহায় হত দরিদ্র নব দম্পতির পাশে দাড়িয়ে মহানুভবতা এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন লক্ষীপুর জেলা রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল জলিল।

পুলিশ বিভাগের সৎ, নিষ্ঠাবানও দায়িত্বশীল এ কর্মকর্তা ইতোমধ্যে রায়পুরের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণসহ অপরাধ দমনে বেশ প্রশংশিত হয়েছেন।

ওসি আব্দুল জলিলের মহানুভবতার গল্ল শুনুন (সাংবাদিক শ‌ফিউল আজম চৌধুরীর ফেসবুক থেকে নেয়া)

লক্ষ্মীপ‌ু‌রের রায়পুর পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড মধুপু‌রের প‌শ্চি‌মে রাস্তাঘাটহীন বাগা‌নের ভিতর বাস ক‌রেন এক অসহায় প‌রিবার। সেই প‌রিবা‌রের আশ্র‌য়ে থা‌কে আ‌রেক পিতা-মাত‌াহীন মে‌য়ে, বয়স ১৯ বৎসর।

মেয়েটির ওই আশ্রয়দাতারা তার সম্পর্কে খালা-খালু। খালু দ‌রিদ্র রিকশাচালক এবং অবস‌রে খা‌লের উপর ভ্যাল‌ে মাছ ধ‌রেন। মে‌য়ে‌টির বি‌য়ের বয়স হ‌য়ে‌ছে, তার বর হি‌সে‌বে পাওয়া গেল প‌রি‌চিত এক‌টি ছে‌লে, বয়স ২২ বৎসর। ছে‌লে‌টিও বেশ দ‌রিদ্র ও এ‌তিম। ভাড়া রিকশা চালায়। আশপা‌শের নারী-পুরুষরা অ‌তি উৎসা‌েহে তা‌দের দুজ‌নের বিবা‌হের আ‌য়োজন শুরু কর‌লো। তা‌রিখ নির্ধারন হোল। ম‌হিলারা বা‌ড়ি বা‌ড়ি গি‌য়ে চাল, টাকা ইত্যা‌দি উঠা‌নো শুরু ক‌রে দিল। উঠা‌নো টাকা দি‌য়ে ম‌হিলারা বাজার থে‌কে নতুন সংসার সাজা‌নোর সকল দ্রব্যসমূহ কি‌নে আন‌লো।
আর পুরুষরা ঐক্যবদ্ধ হ‌য়ে ছে‌লের রোজগা‌রের সহায়তায় এক‌টি মিশুক কি‌নে দেওয়ার প‌রিকল্পনা করলো। সক‌লেই বাড়ালো সহ‌যোগীতার হাত। ৫০/১০০ থে‌কে শুরু ক‌রে ৫ হাজার টাকা প্রর্যন্ত। যার যেরকম সামর্থ। ১১ অ‌ক্টোবর রবিবার দুপু‌রে বি‌য়ে। এলাকার সবাই‌কে দাওয়াত দেওয়া হোল ভিন্ন প্র‌ক্রিয়ায়। বলা হোল- দুপু‌রে সবাই যার যার বা‌ড়ি থেকে খে‌য়ে বি‌য়ে‌তে আস‌বেন। আর বি‌য়ে অনুষ্ঠা‌নের কিছু মেহমা‌নের জন্য খাবা‌রের আ‌য়োজন করা হোল। খাবার খরচ বাদ দি‌য়ে মিশুক কেনার জন্য জমা হোল ৬০ হাজার টাকা। সক‌লের মা‌ঝে হাতাশা, সর্ব‌নিন্ম মিশু‌কের দাম ৭৫ হাজার টাকা। কোথা থে‌কে আস‌বে বাকী টাকা?
ওই এলাকারই সন্তান দৈ‌নিক মা-মা‌টি-মানুষ প‌ত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক এবং মাই‌টি‌ভি’র লক্ষ্মীপুর জেলা প্র‌তি‌নি‌ধি শ‌ফিউল আজম চৌধুরী (জুয়েল) শ‌নিবার রা‌তে রায়পুর থানার অ‌ফিসার ইনচার্জ (ও‌সি) আব্দুল জ‌লি‌লের সা‌থে কথা প্রসংঙ্গে বিষয়‌টি বললে ও‌সি ব‌লেন, বাকী ১৫ হাজার টাকা আ‌মি দিব। আপ‌নি মিশুক কেনার ব্যবস্থা করুন। আর একথা‌টি শু‌নে এলাকাবাসী যেন আমবশ্যায় চাঁ‌দের দেখা পে‌ল। অ‌বিশ্বাস্য, সারা জীবন শু‌নে এ‌সে‌ছে পু‌লিশ মানুষ ধ‌রে ধ‌রে টাকা নেয়। আর আজ শুনছে একজন পু‌লিশ অ‌ফিসার এলাকার সন্তান না হ‌য়েও এতগু‌লি টাকা এক‌টি এ‌তিম-দরিদ্র নবদম্প‌ত্তির জন্য দি‌বেন? সবার পু‌লিশ সম্প‌র্কে এতোদি‌নের ধ্যান-ধারনা পাল্টে গেল। একজন পু‌লিশ অ‌ফিসার যে, এতোখা‌নি মান‌বিক হ‌তে পা‌রে এটা কা‌রো কল্পনা‌তেও ছিলনা। এ যেন তা‌দের কল্পনা‌কেও হার মা‌নি‌য়ে‌ছে। পু‌লিশ যেন শাসক নয় মানু‌ষের সেবক। এলাকাবাসী বি‌শেষ ক‌রে ম‌হিলা‌দের অনু‌রোধ এক‌টি গরীব এ‌তিম মে‌য়ের জন্য উপহার দেওয়া মান‌বিক পু‌লিশ অ‌ফিসারটি যেন এই বি‌য়ে‌তে এ‌সে নতুন বর-কনকে আ‌র্শিবাদ করে যান। তারাও স্বচ‌ক্ষে দেখ‌তে চান মানবতার মানুষ‌টি‌কে। অনু‌রোধে রা‌জি হ‌লেন, ও‌সি আব্দুল জ‌লিল।

দুপু‌রে যথা সম‌য়ে চ‌লে আসলেন তি‌নি। আ‌বে‌গ আর খু‌শি‌তে আত্মহারা হ‌লেন, নব-দম্প‌ত্তি সহ এলাকার আবাল-বৃদ্ধ-ব‌নিতা। তা‌দেরই অনু‌রো‌ধে নতুন মিশুক‌টির চা‌বি বরের হাতে  দি‌লেন তি‌নি। সাথে নগদ ৫ হাজার টাকাও উপহার দেন ও‌সি সা‌হেব। সে এক আনন্দঘন মূহুর্ত্ব। ও‌সি’র প্রশংসায় পঞ্চমুখ এলাকাবাসী। ও‌সি আব্দুল জ‌লি‌লের স্বপ্নীল এই মান‌বিক কাজ‌টি তা‌দের স্মৃ‌তি‌তে থাক‌বে আমৃত্যু।