সিলেটের কৈলাসটিলা-৮ কূপে নতুন গ্যাসের সন্ধান

184
সিলেটের কৈলাসটিলা-৮ কূপ

গ্রিডে যুক্ত হবে প্রতিদিন ২ কোটি ১০ লাখ ঘনফুট

মিরর বাংলাদেশ : সিলেটের কৈলাসটিলা গ্যাস ক্ষেত্রের ৮ নম্বর কূপে গ্যাস পাওয়া গেছে।  শুক্রবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি কৈলাশটিলা ৮ নম্বর কূপের খনন কাজ শুরু হয়। চার মাসে সফলভাবে খনন কাজ শেষে  শুক্রবার সকালে গ্যাসের সন্ধান মিলে।
সূত্র জানিয়েছে, মাটির ৩ হাজার ৪৩৮-৪৭ মিটার গভীরতায় এই গ্যাসের সন্ধান পেয়েছে বাপেক্স। এই কূপ থেকে প্রতিদিন ২ কোটি ১০ লাখ ঘনফুট গ্যাস গ্রিডে যুক্ত হবে। আগামী তিন মাসের মধ্যে পাইপলাইন নির্মাণ করে এই গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করবে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস্ লিমিটেড (এসজিএফএল)।
কৈলাসটিলা-৮ কূপে নতুন গ্যাস স্তর হরাইজোন-৪ এ ৩৪৩৮ থেকে-৩৪৪৭ মিটার গভীরতায় এ গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। কূপটিতে ২৫ হাজার ৪০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আছে। নতুন কূপে পাওয়া গ্যাসের বাজার মূল্য ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের মূল্য ২২ টাকা ৮৭ হিসাব ধরে মজুদ থাকা গ্যাসের বাজার মূল্য জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়। পুরো কৈলাসটিলা স্ট্রাকচারে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুদ ১ হাজার ৯০০ বিসিএফ।
কৈলাসটিলা-৮ কূপ খননে বিজয় ১২ রিগ ব্যবহার করে বাপেক্স। চলতি বছরের ১১ই জানুয়ারি এই কূপ খননের কাজ শুরু হয়। প্রায় সাড়ে চার মাস খনন শেষে গ্যাসের সন্ধান পেলো রাষ্ট্রয়াত্ত্ব কোম্পানিটি। ১৯৬২ সালে কৈলাসটিলা গ্যাসক্ষেত্রটি আবিস্কার হয়। এরপর ১৯৮৩ সালে সেখান থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়।
কৈলাসটিলা গ্যাসক্ষেত্রে বর্তমানে সাতটি গ্যাসটি গ্যাসকূপ রয়েছে। এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক ২ কোটি ৮০ লাখ ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করছে পেট্রোবাংলা।
সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান, বলেন, মাসে সফলভাবে খনন কাজ শেষে কূপটির ৩ হাজার ৫০০ মিটার পর্যন্ত খনন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৪৪০ থেকে ৩ হাজার ৪৫৫ মিটার গভীরতায় নতুন গ্যাসের স্তর পাওয়া গেছে। এখন পরীক্ষা চলছে। এ কূপ থেকে প্রাথমিকভাবে দৈনিক ২১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে বলে ধারণা করছেন মো. মিজানুর রহমান।
সিলেটের কৈলাশটিলায় আরেকটি অনুসন্ধান কূপে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। কূপটি থেকে দৈনিক ২১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মিলবে এবং জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা যাবে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির এই কূপটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে খনন করছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স। কূপের মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে বিদ্যমান পাইপলাইন ও আড়াই কিলোমিটার দূরত্বে ব্যবহারযোগ্য প্রসেস প্লান্ট রয়েছে। তাই দ্রুত এই গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা সম্ভব বলে জানান কর্মকর্তারা।
সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, কৈলাশটিলা ৮ নম্বর কূপ অনুসন্ধান করে গ্যাস পাওয়া গেছে। কূপটির ৩ হাজার ৪৪০ থেকে ৩ হাজার ৪৫৫ মিটার পর্যন্ত গভীরতায় নতুন গ্যাসের স্তর পেয়েছি। তবে এখন পরীক্ষা চলছে। এই কূপ থেকে প্রাথমিকভাবে দৈনিক ২০/২১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে।
তিনি আরও বলেন, এই কূপে এ যাবৎকালে গ্যাসের সবচেয়ে বেশি প্রেশার রয়েছে ৩ হাজার ৩৭৫ পিএসআই। যাকে সুপার প্রেসার বলা হলে। আশা করছি, আগামী ৩ মাসের মধ্যে এখান থেকে প্রাপ্ত গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।
জানা যায়, এ নিয়ে গত ৭ মাসের মধ্যে সিলেটের চারটি আলাদা কূপে গ্যাসের সন্ধান মিলল। এর মধ্যে গত ডিসেম্বর ও নভেম্বরে ১০ নং কূপে এরপর রশিদপুর ও কৈলাশটিলায়।
গত ১০ ডিসেম্বর সচিবালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, গত ৮ ডিসেম্বর ‘সিলেট-১০ কূপ (জৈন্তাপুর-গোয়াইনঘাট) তিনটি স্তরে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। এরমধ্যে প্রথম স্তরে তেলের সন্ধান মিলে। ’
পরীক্ষামূলকভাবে প্রতি ঘণ্টায় ৩৫ ব্যারেল তেলের প্রবাহ পাওয়া গেছে। এছাড়া ওই কূপের তিনটি স্তরে নতুন গ্যাসের সন্ধান মিলেছে।
সিলেট ১০ নম্বর কূপ ২ হাজার ৫৭৬ মিটার গভীরতায় খনন করা হয়। কূপের নিচের স্তরটি ২ হাজার ৫৪০ থেকে ২ হাজার ৫৫০ মিটার টেস্ট করে আড়াই কোটি ঘনফুট গ্যাসের প্রবাহ পাওয়া যায়। ফ্লোয়িং প্রেশার ৩ হাজার ২৫০ পিএসআই। মজুদের পরিমাণ ৪৩ থেকে ১০০ বিলিয়ন ঘনফুট। ২ হাজার ৪৬০ থেকে ২ হাজার ৪৭৫ মিটারে আরো একটি ভালো গ্যাসের স্তর পাওয়া যায়।