সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ১০০ বছর ক্ষমতায় থাকলেও আমার বিন্দুমাত্র আপত্তি নাই

523

মিরর বাংলাদেশ : বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর হাফিজ বলেন, দোয়া করে লাভ নেই। দোয়া করে কিছু হবে না। পৃথিবীতে যত রকমের মতবাদ আছে সবই আমরা কেউ না কেউ ধারণ করি। অদ্ভুত এক দেশ বাংলাদেশ। তবে ১৯৭১ সাল যারা দেখেনি তারা বাংলাদেশ দেখেনি।

শনিবার দুপুরে ধানমন্ডি-২৭ নম্বর ‘জিনজিয়ান রেষ্টুরেন্টে’ দেশের মঙ্গল কামনায় এক দোয়া মাহফিলে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম।

তিনি বলেন,১৯৭১ সালে গ্রামের স্কুলের নবম/দশম শ্রেনি ও কলেজের ছাত্ররা কি অসীম সাহসী সেটি দেখার সুযোগ আমার হয়েছিল। মার্চের শেষ দিকে আমরা যখন ২০/২৫জন বাঙালী কর্মকর্তা বিদ্রোহ করি আমাদের সংখ্যা কম ছিল। কিন্তু ক্যান্টমেন্ট থেকে বের হয়ে দেখি হাজার হাজার যুবক বিশেষ করে ছাত্ররা। সবাই বলে স্যার একটা রাইফেল দেন, কিভাবে গুলি করতে হয় একটু শিখিয়ে দেন। এক ধরণের যুবক ছিল তারা বলে স্যার একটা গ্রেনেড দেন শত্রুর বাংকার কোথায় দেখিয়ে দেন। আমরা আমাদের সাহসের প্রমাণ দিতে চাই। অদ্ভুত সাহসী এই দেশপ্রেমিক যুবকদের দেখা পেয়েছিলাম সেদিন। দুঃখের বিষয় এখন আর সেই ধরণের তরুণদের দেখতে পাইনা। ধীরে ধীরে আমরা একটা মৃতপ্রায় জাতিতে পরিণত হতে চলেছি। অথচ কি দুঃসাহসী ছিল ৭১ এর সেই তরুণেরা। কেন এমন হলো? এটি হয়েছে আমাদের রাজনীতির কল্যাণে। নেবৃবৃন্দ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে বলছেন। যারা ৭১ সাহস দেখিয়েছে, যাদেরকে পরাভূত করেছে তাদেরকে উৎসাহিত করেছে। এবং মুক্তিযুদ্ধকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে তারা সক্ষম হয়েছে।

রাজনীতির ব্যাপক দুবৃত্তায়ন হয়েছে। আগে যারা এলাকায় রাজনীতি করতেন তারা অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন। ইউনিয়ন পরিষদে দেখেছি ২০/২৫/৩০ বছরে এক একজন চেয়ারম্যান হয়। বাজেটও ছিল না। দুর্নীতিও তারা করেনি। বছরের শেষে নিজের পেটে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ বিতরণ করতেন।

পারস্পরিক সম্মানবোধ ছিল। সংসদে বক্তব্য দিয়ে সন্ধার পর এক সঙ্গে চা খেতেন। এত চমৎকার রাজনীতির পরিবেশটা নষ্ট হয়ে গেলো স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই। ব্যালট বাক্স হাইজ্যাক করা যায় সেটা স্বাধীন বাংলাদেশ দেখলাম ৭২ সালে। প্রথম জাতীয় নির্বাচনে জাসদের যখন বিজয় অসম্ভাবী তৎকালীন ছাত্রলীগ বাক্স হাইজ্যাক করলো। ৭৩ সালের নির্বাচনে জাতীয় সংসদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় ১৬জন নির্বাচতি হয়ে গেলো। ব্যালট বাক্স বিভিন্ন জায়গা থেকে ঢাকায় এনে পরাজিত প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হলো। এসব জিনিস আমাদেরকে স্বাধীনতার অববহিত পরে যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা শিখিয়ে গেছে।

এই যে রাজনীতির দৃবৃত্তায়ন হলো এখন পর্যন্ত অন্ধকার সুরঙ্গের পথে এগিয়ে চলেছি। টানেলের নীচে আলোর রেখা দেখতে পাচ্ছি না। তবে কি েএভাবেই চলবে। আজকে সারা দেশের অনেক স্থানে পৌরসভা নির্বাচন হচ্ছে। কালকে পত্রিকায় নিশ্চিত থাকুন যে দেখতে পাবেন বিরোধীদল বিশেষ করে বিএনপির প্রার্থীরা কেউ ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেনি। তারা কেউ এজেন্ট দিতে পারেনি। যেখানে সাহস করে এজেন্ট দিয়েছে মারধর করে বের করে দেওয়া হয়েছে। কোনো ভোটার ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেনি। প্রার্থীরা মার খেয়েছে। অনেক প্রার্থী জীবনের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এখনকার ট্রেন্ড হলো যে মার খায় সেই আসামী হয়। আমি ছয়বার নির্বাচিত হয়েছি। গত তিন বার নির্বাচনে নিজের ভোট দিতে পারিনি। আমার বাসা পুলিশ ও আওয়ামী লীগের মাস্তান বাহিনী ঘিরে রেখেছে। বাসা থেকে বের হতে দেয়নি। এই হলো বিরোধীদলের রাজনৈতিক কর্মীদের বর্তমান অবস্থা। শাসক দলের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আর বলার কিছু নেই। ১৯৭১ সালে যুদ্ধ ছিল গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ। আজকে গণতন্ত্র দেশ থেকে বিলীন হয়ে গেছে। আইনের শাসন নেই। সুশাসন নির্বাসনে। আমরা একটি পুলিশী রাষ্ট্রের নাগরিক হয়ে বসে আছি। যেখানে

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী মেজর অব. হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম বলেছেন, আজকেআমাদের কোনো নাগরিক অধিকার নেই। ভোটাধিকার নেই। এই দুঃসহ অবস্থা থেকে আমরা পরিত্রাণ চাই। আমি আশা করবো ৭১ এ যে ধরণের তরুণদের দেখতে পেয়েছিলাম। যাদের এক মাসের ট্রেনিং দিয়ে যোদ্ধায় পরিণত করেছিলাম, যারা মাইন, কামানের গোলা, মেশিন গানের মুহূর্মূহূ গোলা অতিক্রম করে শত্রুর ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সেই ধরণের সাহসী সন্তানদের আবার রাজপথে দেখতে চাই। আসুন আমরা সবাই মিলে রাজপথে শামিল হয়ে দুঃশাসনের অবসান করতে পারি সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাই।

আমরা রাজনৈতিক দুবৃত্তায়নের অবসান চাই। দুঃশাসনের অবসান চাই। গণতন্ত্র আবার পুনঃপ্রতিষ্ঠা চাই। ভোটাধিকার চাই, মানুবিক অধিকার চাই, সাম্য চাই, মানবিক মর্যাদা চাই। এটা কেউ আমাদের দেবে না। উত্তর দিক থেকেও দেবে না, দক্ষিণ দিক থেকেও দেবে না। কোনো দিক থেকে দেবে না। এটা আমাদের রাজপথে নেমে আদায় করতে হবে। আসুন আমরা সবাই একে অন্যের মঙ্গল কামনা করি। আমরা যেন আমাদের এই প্রিয় দেশটিকে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বসবাসযোগ্য করে রেখে যেতে পারি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ও কলামিস্ট ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, এখন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের বলা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি আর যারা রাতের আধারে ভোট করে তারা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি।

তিনি বলেন, আমরা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার খুব গর্জন শুনি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভুয়া গর্জন শুনি, ভুয়া স্লোগান-ভুয়া ব্যাখ্যা দেখি। সারাদেশে এখন যতটা বিভাজিত আছি এতটা বিভাজিত আমরা আগে কখনই ছিলাম না। বিভাজনে অন্যতম অস্ত্র হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। যারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তারা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি। যারা রাতের আধারে ভোট করে তারা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি।

আসিফ নজরুল বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক লুট করে, দেশের মুদ্রা বিদেশে পাচার করে, দুর্নীতি করে, বৈষম্য করে, মানুষকে গুম করে, ভোট লুট করবে, বাংলাদেশ ব্যাংক লুট করবে, শেয়ার মার্কেট লুট করবে, বাংলাদেশের মানুষকে মেরে-কেটে নাস্তানাবুদ করে ফেলবে, বাংলাদেশের মানুষের সমস্ত অধিকার হরণ করবে তারা নাকি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি? আমি এ রহস্য কিছুতে বুঝলাম না যে বাংলাদেশের মানুষ এটা গ্রহণ করে কিভাবে?

তিনি বলেন, আমাদের বলতে হবে, যারা গণতন্ত্র দেয় না, যারা বৈষম্য সৃষ্টি করে, যারা দেশের সম্পদ লুট করে, তারা সবচেয়ে বড় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপক্ষের শক্তি। বাংলাদেশের ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বড় বিরোধী শক্তি বর্তমানে ক্ষমতায় আছে।

আসিফ নজরুল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আপনাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমি অনুরোধ করব আপনার একটা শব্দ ইউজ (ব্যবহার) করবেন সেটা হচ্ছে ‘মুক্তিযুদ্ধের সঠিক চেতনার পক্ষের শক্তি।’ তারা বলবে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের শক্তি আর আপনারা বলবেন আমরা ‘মুক্তিযুদ্ধের সঠিক চেতনার পক্ষের শক্তি।’ সঠিক চেতনা টা কি, সেটা দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরের। কেন বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করেছিল, কেন আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবন দিয়েছিল।

সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ১০০ বছর ক্ষমতায় থাকলেও আমার বিন্দুমাত্র আপত্তি নাই জানিয়ে তিনি বলেন, আমার কথা হচ্ছে এই দেশটা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র না, এ দেশটা ১৬ কোটি মানুষের। আমি একটা জিনিস দেখে যেতে চাই যে বাংলাদেশের মানুষ ভোটারাধিকার পেয়েছে।

আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য এ রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে দিবেন না আইনগত ভাবে যদি দমন করতে পারেন করেন, আইনগতভাবে মামলা দিতে পারলে দেন। আপনি ১৬ কোটি মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিলেন কেন? এটাতো করতে পারেন না। সংবিধানের আর্টিকেল ৭ অনুযায়ী বাংলাদেশের মালিক বাংলাদেশের জনগণ। বিএনপির লোক অন্যায় করলে আইনগতভাবে শাস্তি দেবার দেন। আপনি বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিবেন কেনো?

বিএনপির সময় মাগুরার একটি আসনে কারচুপির হয়েছিল বলে সকল দল রাজপথে নেমে এসেছিল। কে কোন দল করে তা দেখেননি। এখন ৩০০ আসনের ভোট রাতে হওয়ার অভিযোগ আসে। আপনারা ঐক্যবদ্ধ হতে পারেন না।

দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমদ, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ ন ম এহসানুল হক মিলন, সাবেক সাংসদ নিলুফার চৌধুরী মনি প্রমুখ।

মেজর জেনারেল অব. সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিমের সভাপতিত্বে দোয়া মাহফিলে, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপি নেতা সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদ, এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ ন ম এহসানুল হক মিলন, সাবেক সংসদ সদস্য নিলুফার চৌধুরী মনি, সাবেক সচিব সৈয়দ মারগুব মোর্শেদ, বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল ফখরুল আযম, মেজর জেনারেল অব. ফজলে এলাহী আকবর, মেজর জেনারেল অব. এহতেশাম, রিয়ার এডমিরাল অব. মোস্তাফিজুর রহমান, কল্যাণ পার্টির স্থায়ী কমিটির সদস্য ফোরকান ইবরাহিম, এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মনজু, মেজর অব. সরোয়ার, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল করিম, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমেদ আব্দুল কাদের, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব. শরীফ, কর্নেল অব. হান্নান, সাবেক রাষ্ট্রদূত আসাফউদ্দৌলা, কল্যাণ পার্টির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রফেসর ডা. ইকবাল মাহমুদ, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল অব. হাসান নাসির, জামায়াতে ইসলামীর নেতা মাওলানা আব্দুল হালিম, ইতিহাসবিদ নজরুল ইসলাম, মাওলানা মোশারফ হোসেন, বিএসএমএমইউএর সার্জারি বিভাগের সাবেক ডিন প্রফেসর সাইফুল ইসলাম, জাগপা মহাসচিব সাইফুল ইসলাম, ঢাবির অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারীসহ অর্ধশতাধিক অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।