১০ ডিসেম্বর ঘিরে নারায়ণগঞ্জে ‘সর্বোচ্চ সতর্কতা’

246

* ঢাকা-চট্রগ্রাম ও সিলেট মহাসড়কের পয়েন্টে পয়েন্টে পুলিশের তল্লাশী
* শহরে প্রস্তুত রাখা হয়েছে সাজোয়া যান ও জলকামান

মুহা:ইউসুফ আল আজিজ  :
আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থা বিরাজ করেছে। বিশেষ করে সর্তক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ প্রশাসন। মহাসড়কে বাসে বাসে চলছে তল্লাশী। বিএনপির নেতাকর্মীদের দাবি সমাবেশকে কেন্দ্র করেই এই তল্লাশি ও তৎপরতা বৃদ্ধি করছে পুলিশ। যাতে করে বিএনপির কোনো নেতাকর্মী বাসা থেকে বাহির হতে না পারে। তবে পুলিশ বলছে এটা তাদের নিয়মিত দায়িত্ব। তারই অংশ হিসেবে তারা এই তল্লাশি করছেন ।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, চেকপোস্ট বসানো আজ তো নতুন না। আমরা মাঝেমধ্যেই চেকপোস্ট বসিয়ে থাকি। এর মধ্যে কেউ যদি নাশকতা করার পরিকল্পনা করে তাহলে তো সে পুলিশের তল্লাশি ভয় পাবেই। এটা আমাদের রুটিনওয়াক
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়া এলাকায় পুলিশের চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। সেই সাথে চাষাঢ়া মোড়ে প্রস্তুত রাখা হয়েছে সাজোয়া যান ও জল কামান। পাশাপাশি ক্ষণে ক্ষণে শহরজুড়ে চলছে পুলিশের মহড়া।
তিনি বলেন, এইমাসে বিজয় দিবস, থার্টি ফার্স্ট নাইটসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট রয়েছে। সাধারণত যেকোনো ইভেন্ট থাকলেই আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করার জন্য চেকপোস্ট বসিয়ে থাকি। কেউ যাতে নাশকতামূলক কর্মকা- করতে না পারে সে বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ তৎপর রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের চাষাঢ়া এলাকায় যারাই আসছেন তাদেরকেই চেক করা হচ্ছে। বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীদেরও নামিয়ে সময় নিয়ে সারা শরীরজুড়ে তল্লাশি করছেন পুলিশের সদস্যরা। সাথে থাকা মোবাইলও চেক করছেন তারা। যাদের গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হচ্ছে অথবা যাদের মোবাইলে বিএনপি কিংবা সরকার বিরোধী কোনো বিষয় পাওয়া যাচ্ছে তাদেরকে কিছু সময়ের জন্য আটকে রেখে নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এতে করে অনেকেই হয়রানিরও শিকার হচ্ছেন।
গার্মেন্টস শ্রমিক তপন দাস জানান , আমি একটি কারখানায় চাকরি করি। আমি কোনো রাজনীতি বুঝি না। সবসময় চাকরি নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়। বৃহস্পতিবার সকালে চাষাঢ়া আসতেই পুলিশ আমাকে তল্লাশির নামে দীর্ঘক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখে। অথচ আমার কাছে কিছুই ছিল না। আমরা সাধারণ মানুষ। আমি তাদের বলেছি তারপরেও আমাকে শুধু শুধু আটকিয়ে রেখেছে। এখন আমাকে অফিসে বসের কাছে জবাব দিতে হবে। সাধারণ মানুষদের এভাবে হয়রানি করার কি দরকার?
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য মাশুকুল ইসলাম রাজীব বলেন, আমরা যারা বিএনপি করি তারা বাসা বাড়িতে থাকতে পারি না। আমাদের নেতাকর্মীদের গায়েবি মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। আমাদের পরিবার পরিজন ছেড়ে দিন যাপন করতে হচ্ছে। এখন রাস্তাঘাটেও তল্লাশি করছে। আসলে বিএনপির কর্মসূচি আসলেই পুলিশ এরকম করে থাকে। তারা শুধু শুধু সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে থাকে।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, সরকার কোনো কর্মসূচির কথা শুনলেই ভয় পায়। আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। সরকার পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করছে বিএনপির বিরুদ্ধে। তবে তারা যতই বাধা দিক আমাদের বিএনপির নেতাকর্মীদের আটকিয়ে রাখতে পারবে না।
তবে চেকপোস্টে দায়িত্ব পালন করা সদর থানা পুলিশের এসআই রুবেল বলেন, এটা আমাদের নিয়মিত ডিউটি। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের রাখার স্বার্থে প্রতিদিনই আমরা এই তল্লাশি চালিয়ে থাকি। এটা নতুন কোনো বিষয় না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক, সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর ও মেঘনাঘাট টোল প্লাজায় তিনটি পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। চেকপোস্টগুলোতে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা যাত্রী ও চালকরা কে কোথায় যাচ্ছে তা জানতে চান। বাসে যাত্রীদের ব্যাগ, ব্যক্তিগত গাড়ির ভেতর ও পেছনে ব্যাকডালা তল্লাশি চালাচ্ছেন।
এদিকে মহাসড়কে গত দুদিনে কোনো পয়েন্টেই তল্লাশি চালিয়ে এখন পর্যন্ত কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি। পাশাপাশি তল্লাশিকালে কোনো যানবাহনকে দীর্ঘক্ষণ থামিয়ে রাখা কিংবা কোনো যাত্রীকে নামিয়ে দিতে দেখা যায়নি। তবে বৃহস্পতিবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহনের চাপ তুলনামূলক কম ছিল। প্রত্যেকটি যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের পরিদর্শক (অপারেশন) হাবিবুর রহমান জানান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের পক্ষ থেকে সিদ্ধিরগঞ্জের একটি পয়েন্টেই চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। নাশকতার উদ্দেশ্যে কোনো ব্যক্তি যানবাহনে বিস্ফোরক দ্রব্য বহন করে কিনা সেজন্য পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ তল্লাশি চলবে বলে জানান তিনি।
সোনারগাঁ থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আহসান উল্লাহ জানান, আমাদের পক্ষ থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুটি পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার লক্ষ্যেই আমাদের নিয়মিত রুটিন হিসেবে এই তল্লাশি কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম জানান, আমাদের পক্ষ থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনাঘাট টোলপ্লাজা এলাকার ঢাকামুখী লেনে একটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। কোনো যানবাহনে অবৈধ মালামাল থাকতে পারে কিংবা অস্ত্র থাকতে পারে তাই সকাল থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো আমাদের তল্লাশি চলছে। তবে এখনো পর্যন্ত আমরা কিছু পাইনি।